রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় এবং লংগদু মৌজার হেডম্যানের দায়িত্বে কেউ না থাকায় খারিজ, নামজারি সম্পন্ন না হওয়া, জমি ক্রয়-বিক্রয়ের রেজিস্ট্রি, মালিকানা পরিবর্তনসহ নানা কাজে ভোগান্তিতে পড়েছেন উপজেলার সেবাগ্রহী জনসাধারণ।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রায় তিন লাখ মানুষ ও লংগদু মৌজার স্থানীয়রা ভূমি সংক্রান্ত সেবা থেকে এখন অনেকটাই বঞ্চিত।
নামজারি জমা খারিজের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ার অভাবে অনেকেরই জমি বিক্রি ও মালিকানা পরিবর্তন সহ দলিলপত্র সংশোধন প্রায় বন্ধ হয়ে আছে।
লংগদু উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, সার্ভেয়ার না থাকায় খারিজ, নামজারি জমা খারিজের আবেদন ফাইল, ভূমি জরিপ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত কাজের আনুমানিক হিসাব তৈরি, নির্মাণাধীন প্রজেক্ট সম্পাদিত হওয়ার নকশা তৈরি, প্রজেক্টের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সামগ্রিক হিসাব, প্রজেক্ট চলার বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সামগ্রিক হিসাবের পর্যালোচনা, স্থাপনা নির্মাণে নিযুক্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে প্রয়োজন অনুযায়ী সহযোগিতা দেওয়া সহ ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্র স্তূপ হয়ে জমে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ জনগণ।
সূত্র মতে, উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. আবুল কালাম কর্মস্থল থেকে বদলি হয়েছেন চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে। ফলে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার পদটি মে থেকে শূন্য রয়েছে।
আরো জানা গেছে, লংগদু মৌজার হেডম্যান কুলিন মিত্র চাকমা (আদু) এক বছর আগে মৃত্যুবরণ করলে হেডম্যান পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে গত এক বছরের অধিক সময় ধরে মৌজার অধীনস্থ স্থানীয় জনসাধারণ ভূমি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অতিদ্রুত হেডম্যানের দায়িত্ব প্রদানে জনদূর্ভোগ নিরসনে ভূমি সংক্রান্ত সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ অনুযায়ী প্রয়াত আদু হেডম্যানের বড় ভাই কল্যাণ মিত্র চাকমাকে হেডম্যানের দায়িত্ব দেয়ার গুরুত্বারোপ করছেন অনেকেই। তবে এ প্রতিবেদন করা পর্যন্ত লংগদু মৌজার হেডম্যান কর্তৃক সকল ধরনের ভূমি সেবা বঞ্চিত স্থানীয়রা। পাশাপাশি হেডম্যান পদটিও শূন্য রয়েছে বলে জানা যায়।
উপজেলার গুলশাখালী গ্রামের ফজর আলী, লংগদু ইউপির মানিকজোড়ছড়া গ্রামের রিটন চাকমাসহ কয়েকজন জানান, প্রায় ৩-৪ মাস আগে নামজারি, জমা খারিজের আবেদন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত জমির নামজারি, জমা খারিজ হয়নি। কবে নাগাদ জমা খারিজ হবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না ওই অফিসের কেউই। হেডম্যান না থাকায় জমিজমা বিক্রি ও দলিলপত্র সংশোধন করতে পারছি না।
কালাপাকুজ্জ্যা ইউপির হোসেনপুর গ্রামের আবু বক্কর বলেন, ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার না থাকায় আমার জমির নামজারি করতে পারছি না। সেবা নিতে এসে আমার মতো অনেকেই এখন বেকায়দায় পড়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে হেডম্যান ও সার্ভেয়ার না থাকায় অফিসের নিয়মিত কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে ফাইল আটকে থাকাসহ ভূমি সংক্রান্ত বহু মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্মচারী না থাকায় আবেদনকারীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকিব ওসমান বলেন, ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার পদটি পূরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শীঘ্রই এ পদে জনবল দেয়া হবে। তিনি বলেন শুধু সার্ভেয়ার নয়, লংগদু মৌজার হেডম্যান পদ শূন্য থাকায় সেবাগ্রহীতাদের কাঙ্খিত সেবা দেওয়ায় বিঘ্ন ঘটছে। জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে অবগত করা হবে। খুব দ্রুত এ ভোগান্তি দূর হবে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।