লংগদু কলেজকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন বড়াদমবাসী

সবুজ বন-বনানী প্রকৃতির বুকে ও পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটির লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়নের একমাত্র উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লংগদু কলেজ। স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে ও দানশীল ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তায় ২০১৭ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠা হয়। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অল্প সময়ে কলেজটি একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। পাহাড়ি এই এলাকাজুড়ে ছোট বড় অনেকগুলো গ্রাম নিয়ে গঠিত কলেজটি। যেখানে রয়েছে রেজিস্টার ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক মাদ্রাসা।

জানা যায়, এই এলাকা প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় জেলা ও উপজেলা সদর থেকে দূরবর্তী থাকায় উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চল, অন্যদিকে সামর্থ্যবান অভিভাবকের সংখ্যা নগণ্য হওয়ায় উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ও অকালে ঝরে পড়ে এই অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী।

উচ্চশিক্ষার আলো ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিতে বৃহত্তর এলাকার সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্টা লাভ করে লংগদু কলেজ। এবারের (২০২৩-২০২৪) শিক্ষা বর্ষে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বরণ করে কলেজটি শিক্ষায় তার ধারাবাহিক পদযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।

সচেতন মহল মনে করেন এই কলেজটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার কারণে ঝড়ে পড়া রোধসহ শিক্ষার হার বৃদ্ধি সহ কাঙ্খিত পরিমাণে এলাকার মানুষের উন্নতি হবে এবং সময়ের পরশ পাথর লংগদু কলেজ থেকে প্রতি বছর আলোকিত মানুষের সৃষ্টি হবে।

লংগদু সরকারি মডেল কলেজের প্রভাষক নুর মোহাম্মদ বলেন, শিক্ষা ছাড়া কোনো সমাজ, জাতি কিংবা দেশ সভ্য, সমৃদ্ধ হতে পারে না। শিক্ষাই পারে মানুষের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করে দেহ মনকে সুস্থ রেখে সঠিক লক্ষ্যে পৌছে দিতে। তদুপরি লংগদু কলেজটিও আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অবদান রাখবে।

লংগদু কলেজ এই এলাকায় উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বাড়ির পাশেই কলেজ থাকায় এলাকার পাহাড়ি মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। লংগদু কলেজ বড়াদমবাসী তথা লংগদুবাসীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কলেজের একজন উদ্যোক্তা বলেন, কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে আমিসহ আমার গ্রামবাসী (বড়াদমবাসী) কলেজের জন্য জমি দান করেন। এলাকার প্রতিটি গ্রামের মানুষ আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। কলেজটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জমি, অর্থ, শ্রম ও পরিকল্পনা দিয়ে যারাই সহযোগিতা করেছেন। এখনো করে যাচ্ছেন। সবার প্রতি আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। পাঠ্য বইয়ের জ্ঞানের পাশাপাশি নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দান এবং কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ এলাকার সচেতন নাগরিকগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অভিভাবক অজিত চাকমা বলেন, প্রথমে আমি এলাকাবাসী ও উদ্যোক্তাগণকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নিজ এলাকার মধ্যে একটি কলেজে আমার মেয়েকে ভর্তি করাতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। বাড়ির পাশে কলেজ হওয়াতে অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে বলে মনে করি।

কলেজের একাদশ শ্রেণীর নবীন শিক্ষার্থী ত্বরিন চাকমা বলেন, নিজের এলাকায় উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাওয়ায় খুব ভালো লাগছে। আমাদের এলাকার নিম্ন আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীদেরকে নিজ এলাকায় উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ায় এলাকাবাসী ও কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

সমাজকর্মী স্যামুয়েল চাকমা বলেন, বর্তমান সময়ে এই নিভৃত পল্লী এলাকা শতভাগ শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে এলাকার সচেতন মানুষের ও পরিশ্রমী শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায়।

লংগদু কলেজের অধ্যক্ষ সুগতালংকার ভান্তে বলেন, এই কলেজকে এগিয়ে নিতে এলাকাবাসীসহ প্রবাসী ভাইদের বর্তমান সময়ের মতো ধারাবাহিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে কলেজকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব বলে আমার বিশ্বাস। তবে সরকারি সহযোগিতা আমরা একান্ত ভাবেই আশা করছি।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে লংগদুর শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষার মানোন্নয়নে নানামুখী ভূমিকা পালন করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় উপজেলাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে লংগদু কলেজে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কাজ শুরু করেছে বৃহত্তর এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।