রাঙামাটির লংগদুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের শোক র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৪ মে) সকালে লংগদু থানা শাখার উদ্যোগে ১৯৮৯ সালের এইদিনে লংগদুতে বসত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার শহীদদের স্মরণে একটি শোক ও স্মরণসভা করেন পিসিপি।
এ সময় লংগদু পিসিপি থানা শাখার সভাপতি রিকেন চাকমার সভাপতিত্বে এবং সহ-সভাপতি সুদীর্ঘ চাকমার পরিচালনায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক রিন্টু মনি চাকমা। শোক প্রস্তাব শেষে শহীদদের স্মরণে ২মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি লংগদু থানা কমিটির সাধারন সম্পাদক মনি শংকর চাকমা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেএসএস লংগদু থানা কমিটির ভূমি ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক বিনয় প্রসাদ চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি লংগদু থানা শাখার সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা।
এছাড়াও পিসিপি লংগদু থানা শাখার নেতৃবৃন্দ এবং চিবেরেগা, চাইল্যাতলি ও বগাচতর এলাকার জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মনি শংকর চাকমা বলেন, আজ বর্বরোচিত লংগদু গণহত্যাকান্ডের ৩৪ বছর। ১৯৮৯ সালের এই দিনে হত্যাকান্ড ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা শুরু হয়ে ৬ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকে এই পাশবিক ধ্বংসলীলা। শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ মোট ৩২জন নিহত হয় এই গণহত্যায়। আহত হয় অন্তত ১১ জন। লংগদু সদরসহ আশেপাশের ৯টি গ্রামের ১০১১টি ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয় এবং লুটপাট চালানো হয়। এছাড়াও একটি সরকারি প্রাথমিক ও একটি উচ্চ বিদ্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ৬টি বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ধ্বংসলীলা চালানো হয়।হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়।
তিনি আরও বলেন, সচেতন ছাত্র জনতা এই ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকার রাজপথে ২০ মে জন্ম নেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ। লংগদু ছাত্র সংগঠনকে আরো উদ্দ্যোগী ও সচেতন হয়ে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন ও ভূমিকা রাখতে হবে।
বিশেষ অতিথি বিনয় প্রসাদ চাকমা বলেন, কোন কিছু ভুলে যাওয়া অপরাধ তবে কিছু জিনিস ভুলে যাওয়া নাকি বিড়ম্বনা হয়। কিন্তু লংগদুর এই ঘটনা ভূলে যাওয়ার মতো নয়, যে ঘটনা আঘাত করে বুকের তাজা রক্ত কেঁড়ে নিয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের উদ্দ্যেশে আহ্বান করে তিনি বলেন বজ্র কঠিন শপথ নিয়েই চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
বিশেষ অতিথি তপন জ্যোতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ২৫ বছর অতীত হয়ে গেল কিন্তু পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। হাজারো জনগণের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত চুক্তিকে বাস্তবায়ন করতে হলে ছাত্র যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
সভাপতি রিকেন চাকমা ছাত্র পরিষদের ভূমিকা ও গুরুত্বারোপ তুলে ধরে লেখাপড়ার পাশাপাশি কলেজ পর্যায়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সভা সমাপ্তি ঘোষণা করেন।