লাশ কাঁধে কাদা-জল পাড়ি দিয়ে কবরস্থানে, ২৫ বছরেও হয়নি সড়ক

‘কাঁধে লাশ, বাড়ির আঙ্গিনার এক কিলোমিটার দূরে মসজিদের মাঠে জানাজার নামাজ শেষে হাঁটুপানি কাদা-জল পাড়ি দিয়ে স্বজনরা লাশ নিয়ে এসেছে কবরস্থানে।’ মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের খোর্দ্দ গহিরা এলাকার আমিরুজ্জামান (৬০) নামে এক ব্যক্তির লাশ কবরস্থানে এনে এ দুর্ভোগে পড়েন স্বজনরা। আর কোনো উপায় না পেয়ে হাঁটুপানির কাদা-জল পাড়ি দিয়ে কবরস্থানে নিয়ে দাফন করে লাশ। মৃত আমিরুজ্জামান একই এলাকার মৃত আবদুল মজিদের পুত্র। মঙ্গলবার ভোরে তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, সারা বছর ধরে এখানে কাদা ও পানি থাকে। পানিগুলোর যাওয়ার জন্য সরকার যে কালভার্ট নির্মাণ করেছে সেগুলো অনেকেই বাড়ি নির্মাণ করার সময় ভরাট করে পেলেছে। এ শত বছরের কবরস্থানে ৬টি পাড়া মহল্লার মানুষের শেষ ঠিকানা। সাগরের জোয়ারের পানিতে সড়ক বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে আর কোনদিনও সড়ক নির্মাণ হয়নি। প্রায় ২৫ বছর ধরে কবরস্থানে যাওয়ার কোনো সড়ক না থাকায় কষ্টের শেষ নেই এ এলাকার মানুষের। স্বজনদের কবর জেয়ারতে যাওয়ার জন্য স্থানীয়দের কাদা পানি পেরিয়ে লাশ নিয়ে যেতে হয় কবরস্থানে।

মৃত আমিরুজ্জামানের পুত্র মো. সেলিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বজনরা যখন মারা যায়, তখনই বুঝা যায় কবরস্থানের প্রয়োজনীয়তা। সমাজে বিত্তবান যারা রয়েছেন তারা যদি সহযোগিতা করত; তাহলে মৃত মানুষ আর জীবিত মানুষের এত দুর্ভোগ হতো না। কবরস্থানের জন্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি নির্দেশ দিলেও কেন কাজ করছেন না তা আমাদের জানা নেই।’

স্থানীয় রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ বলেন, ‘কাদা ও পানির উপর দিয়ে এভাবে লাশ দাফনের জন্য কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া অমানবিক। এ কবরস্থানের জন্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এক ঠিকাদার কাজটি পাওয়ার পরও এখনও পর্যন্ত কাজটি করছেন না। আমি ঠিকাদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও এটি সমাধান হয়নি। বিষয়টি আমি উপজেলা প্রকৌশলী অফিসকে জানিয়েছি।

সড়কটির বিষয়ে জানতে উপজেলা প্রকৌশলী তসলিমা জাহানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে আগামী রবিবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে যদি ঠিকাদার সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে টেন্ডার দেওয়া হবে।’

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।