লোহাগাড়া-বাঁশখালীতে ভোট, বিজিবি মোতায়েন

চতুর্থ ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চট্টগ্রামের দুই উপজেলায় লোহাগাড়া এবং বাঁশখালীতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল। মঙ্গলবার (৪ জুন) কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনি সরঞ্জাম, তবে ব্যালট যাবে সকালে।

নির্বাচন কমিশন সুত্রে জানা গেছে, বাঁশখালী ও লোহাগাড়া উপজেলার ১৮৬টি ভোট কেন্দ্রের ১৪৩৭টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে বাঁশখালী উপজেলায় ১১৫টি কেন্দ্রে ৮৫৬টি বুথ ও লোহাগাড়া উপজেলায় ৭১টি কেন্দ্রে ৫৮১টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে।

এই দুই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান মাহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ মোট ২২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারমধ্যে বাঁশখালিতে ১৪ এবং লোহাগাড়ায় ৮ জন। দুই উপজেলার ১৭৬টি ভোট কেন্দ্রে ৬ লক্ষ ৭০৬ জন ভোটার ব্যালট পেপারের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. এনামুল হক বলেন, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি শেষ। আশা করছি, তিন ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মতো শেষ ধাপের নির্বাচনও সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে এই দুই উপজেলায় ১০ প্লাটুন বিজিবি ৩১ জন ম্যাজিস্ট্রেট, র‍্যাব, পুলিশ- আনসার মোতায়েন করা হয়েছে।

লোহাগাড়ায় ‘খোরশেদ-সিরাজে’র হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

খোরশেদ আলম চৌধুরী এবং সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। দুই এলাকার দুইজনই চৌধুরী পরিবারের সন্তান। তারা আবার সম্পর্কে বেয়াই। এরমধ্যে প্রথমজন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং অপরজন চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। দুইজনই এবারের লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। আর তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় ভাগ বসিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মাবুদ সৈয়দ। সব মিলিয়ে ৩ প্রার্থীর শক্ত অবস্থান হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে এ উপজেলায়। এখন দেখার বিষয় ব্যালটের লড়াইয়ে কে জয়ী।

বুধবার (৫ জুন) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুর ১টা থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ব্যালটবাক্সসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম। তবে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে ব্যালটপেপার পাঠানো হবে বুধবার সকালে।

এদিকে নির্বাচনী মাঠে কাজ করবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১২ জন, স্ট্রাইকিং ফোর্স ৯টি, ১২ প্লাটুন বিজিবি, র‍্যাবের ২টি টিম, মোবাইল টিম ২২টি এছাড়া বিপুলসংখ্যক পুলিশ এবং আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

৯টি ইউনিয়নে ৭১টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৩ হাজার ৬২৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৯ হাজার ১০৮ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪ হাজার ৫১৮ জন।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। কেন্দ্রে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে সে যেই প্রার্থীর লোকই হোক না কেন সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইনামুল হাসান বলেন, ভোটগ্রহণের সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ ব্যালটবাক্স এবং নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে। তবে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে ব্যালটপেপার পাঠানো হবে ভোটেরদিন বুধবার সকালে।

এবার এ উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ২ জন এবং ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৩ জন।

এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী পেয়েছেন আনারস প্রতীক, চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ঘোড়া ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মাবুদ সৈয়দ মোটরসাইকেল প্রতীক পেয়েছেন। মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে শাহীন আক্তার ফুটবল ও জেসমিন আকতার কলস। ভাইস-চেয়ারম্যান পদে মো. জামিল উদ্দীন টিউবওয়েল, মোহাম্মদ সরওয়ার মামুন চশমা ও ফরহাদুল ইসলাম তালা প্রতীকে নির্ বাচন করছেন।

বাঁশখালীতে ৩ পদে প্রার্থী ১৪, প্রত্যাহার ১

চতুর্থ ও শেষ ধাপে অনুষ্ঠেয় বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা গতকাল মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কাল (বুধবার) সকাল হলেই শুরু হবে ভোটগ্রহণ। সকাল ৮ টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪ টায় শেষ হবে ভোটগ্রহণ।

নির্বাচন কমিশন সুত্রে জানা গেছে, এবারের বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রার্থী থাকলেও ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন তিনজন। তারা হলেন—দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম (দোয়াত-কলম), সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এমরানুল হক (আনারস) ও সাবেক পৌর মেয়র শেখ ফখরুদ্দিন চৌধুরী (ঘোড়া)। তবে ভোটের তিন দিন আগে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে যুবলীগ নেতা মো. জাহিদুল হক চৌধুরী মার্শাল নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আকতার হোসেন (তালা), আরিফুর রহমান সুজন (টিয়াপাখি), ইমরুল হক চৌধুরী ফাহিম (টিউবওয়েল), আরিফুজ্জামান আরিফ (চশমা), এম এ মালেক মানিক (উড়োজাহাজ), মো. ওসমান গণি (মাইক) ও মোহাম্মদ হোসাইন (বই)।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রেহেনা আকতার কাজমি (কলস), ইয়ামুন নাহার (প্রজাপতি), নুরীমন আক্তার (ফুটবল)।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হারুন মোল্লা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত মাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এদিন বাঁশখালীর ১১৫টি ভোটকেন্দ্র ১১৫ জন প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং ৫৫৬ জন ও পোলিং অফিসার ১৭১২ জন দায়িত্ব পালন করবেন। ১৪ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯০৬ জন ভোটার রয়েছেন। ৮৫৬টি বুথে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ২২ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৬ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ অফিসারসহ ৮শতাধিক পুলিশ সদস্য মাঠে থাকবেন।

সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তৎপর থাকবে বলেও জানান তিনি। নির্বাচনে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি মোতায়েন থাকবে। থাকবে পুলিশ সদস্য, স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ আনসার, ভিডিপি, গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার, দফাদার এবং র‌্যাবের বিশেষ টহল।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।