শিক্ষক সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

পাহাড়ে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে ১৯৬৩ সালে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় স্থাপন করা হয় দেশের অন্যতম কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (বিএসপিআই)। তিন পার্বত্য জেলাসহ সারাদেশে এই প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট সুনাম থাকার ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতে আসে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৬টি ডিপার্টমেন্টে প্রায় ২ হাজার ২শ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। আর প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৯ জন। এছাড়া স্টেপ শিক্ষক রয়েছে ১২ জন এবং খন্ডকালীন শিক্ষক রয়েছে প্রায় ১৯ জনের মতো। সংশ্লিষ্টদের দাবী কমপক্ষে ১শ শিক্ষক প্রয়োজন ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানে।

শিক্ষক সংকটের ফলে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ক্লাস পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে ছয়টি ডিপার্টমেন্ট’র প্রতিটি ডিপার্টমেন্টেই শিক্ষক সংকটে নিয়মিত ক্লাসে ব্যাঘাত ঘটছে। এতে দুর দুরান্ত থেকে আগত শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা চরম হতাশায় ভুগছেন। তারা সকলেই দ্রুত সময়ে অত্র প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট কাটিয়ে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন।

সম্প্রতি কাপ্তাই সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গিয়ে শিক্ষক সংকটের বিষয়ে কথা হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে। এসময় প্রতিষ্ঠানটির ইলেকট্রিক ডিপার্টমেন্ট এর ৩য় পর্বের ছাত্র রিসাদ মাহমুদ বলেন, আমি এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর ইচ্ছা জাগে অত্র প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করবো। এবং আমার সেই ইচ্ছা পূরণ হলেও বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতে এসে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছি আমি। শিক্ষক সংকটের ফলে আমাদের নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। এতে সময়টা চলে যাচ্ছে কিন্তু সঠিক জ্ঞান অর্জনে থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।

প্রতিষ্ঠানটির মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট এর ৩য় পর্বের ছাত্র আব্দুল মজিদ জানান, শিক্ষক সংকটের ফলে যে বড় সমস্যাটি দেখা দিয়েছে সেটি হলো নিয়মিত ক্লাস না হওয়া। তবে খন্ডকালীন কিছু শিক্ষক দিয়ে মাঝেমাঝে ক্লাস চলমান রাখা হয়। কিন্তু প্রতিটি বিষয় অনুযায়ী স্থায়ী এবং দক্ষ শিক্ষক পেলে প্রতিটি বিষয়ের উপর শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়তো। এতে সবাই উপকৃত হতো।

প্রতিষ্ঠানটির ইলেকট্রিকেল ডিপার্টমেন্ট এর ৩য় পর্বের আরেকজন ছাত্র শরিফ জানান, পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি হাতে কলমে আমাদের যেই শিক্ষাটা পাওয়া দরকার সেটি আসলে শিক্ষক সংকটের ফলে আমরা নিয়মিত পাচ্ছি না। বিশেষ করে আমরা অনেক বিষয়ে অজ্ঞ রয়ে যাচ্ছি। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের স্যারেরা খুবই আন্তরিক, উনারা খুব চেষ্টা করেন আমাদের সঠিক শিক্ষাটা দেওয়ার জন্য। আশা করছি আমরা দ্রুত সময়ে শিক্ষক সংকটের এই সমস্যা কাটিয়ে উঠবো।

এদিকে শিক্ষক সংকটের বিষয়ে কাপ্তাই সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর অটোমোবাইল টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের চীফ ইন্সট্রাক্টর ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী রহমতউল্লাহ বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আসলেই সত্য। যার ফলে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। আর মন্ত্রনালয়ের বিধি অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানে ১শত ১৯ জন শিক্ষক থাকার কথা হলেও আমরা স্থায়ী শিক্ষক রয়েছি মাত্র ১৯ জন। বাকীটা স্টেপ শিক্ষক এবং খন্ডকালীন কিছু শিক্ষক রয়েছে তাদের দিয়ে আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

মন্ত্রণালয়ে ডিমান্ড দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা শিক্ষক সংকটের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। যেহেতু শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি আমাদের হাতে নেই। নিয়োগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে হয়ে থাকে। নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়ে গেলে আশা করছি আমরা দ্রুত সময়ে শিক্ষক সংকটের সমস্যা কাটিয়ে উঠবো।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।