শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ে রান্না-ভোজ, পরীক্ষা যখন উৎসব

কেউ পেঁয়াজ কাটছেন, কেউ আলু কিংবা আদা রসুন। কারও ব্যস্ততা আগুন জ্বালাতে কিংবা অন্যসব জিনিসপত্র আনা নেওয়ায়। শিক্ষার্থীদের সাথে রয়েছেন শিক্ষকরাও। একজন এক কাজ করছেন অন্যজন আরেকটি। সবে মিলে যেন এক দুর্দান্ত টিম ওয়ার্ক। সচরাচর দেখলে হয়তো মনে হতে পারে এটি একটি বনভোজনের চিত্র। কিন্তু আসলে এটি কোন বনভোজন নয় বদলে যাওয়া শিক্ষাব্যবস্থার পরিবির্তিত মূল্যায়ন পদ্ধতি।

বলছিলাম চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মারুফ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন জীবন ও জীবিকা বিষয়ের স্কিল কোর্সের(কুকিং) কার্যক্রমের কথা। যেখানে পরীক্ষায় ভয় যেন পরিণতে হয়েছিলো উৎসবের আমেজে।

জানা গেছে, উত্তর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারুফ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়৷ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিমপাশে মিরসরাই পৌরসভা এলাকায় বিদ্যালয়টির অবস্থান। প্রতিষ্ঠার অল্প কয়েক বছরে ফলফল, খেলাধুলা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বেশকিছু সফলতা এই প্রতিষ্ঠানটির দখলে গেছে।

সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার সকল পর্যায়ে দায়িত্বশীল, স্বপ্রণোদিত,দক্ষ ও সংবেদনশীল, জবাবদিহিতামূলক, একীভূত ও অংশগ্রহণমূলক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নতুন শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে । শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি ,জ্ঞান, যোগ্যতা, মূল্যবোধ ও সখ্যতা বাড়াতে জাতীয় শিক্ষাক্রমের মূল ভিত্তিতে এসেছে আমুল পরিবর্তন।

তারই ধারাবাহিকতায় মারুফ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন জীবন ও জীবিকা বিষয়ের স্কিল কোর্স (কুকিং) আয়োজন সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে৷

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজনের প্রস্তুতি৷ শিক্ষার্থীরা নিজেরাই কেটেছেন পেঁয়াজ,মরিচ,আদা, রসুন। একেকজন একেক কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছে৷ রান্নার আয়োজনে ছিল ভাত, ডাল, মুরগীর মাংস, আলু ভর্তা ও মিক্সড সবজি৷ প্রায় ৩৪০ জনের জন্য রান্না করা হয়৷

আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাড়তি আনন্দ দিতে উপস্থিত ছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণির অভিভাবক মিরসরাই প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক নুরুল আলম, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এম মাঈন উদ্দিন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাদমান সময়, দপ্তর সম্পাদক ইকবাল হোসেন জীবন প্রমুখ।

মারুফ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজিম উদ্দিন বলেন, এই বয়সে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নিজ হাতে দায়িত্ব নিয়ে এতসব কাজ করেছে তাছাড়া দলীয় কাজ উপস্থাপন, টিম লিডার হিসাবে লিডারশীপ প্রদর্শন আমার কাছে মনে হয়েছে শিক্ষার্থীরা যেন রীতিমত উৎসবে মেতেছে।

তিনি বলেন, ছাত্রজীবনের এক ভীতিকর অধ্যায় ছিল পরীক্ষা। এ পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর চোখেমুখে আনন্দ ভরপুর ছিল। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের সবান্ধব সহযোগিতায় সফলভাবে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের মধ্যাহ্ন ভোজের রান্নার আয়োজন সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে বদলে গেছে প্রথাগত শিখন পদ্ধতি ও শিক্ষার্থী মূল্যায়নের ধরণ। পরিবর্তন এসেছে পাঠ্য বইয়ের বিষয়বস্তু ও পাঠ বিন্যাসেও।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।