শিখরে ওঠার স্বপ্ন ওদের

চারদিকে ঝলমলে রোদের আলো। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে কেউ একাকি কেউ দল বেধে জড়ো হয়েছেন। পিতা-মাতা কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে এসেছেন অনেকে। চোখে মুখে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ওদের। কেউ হতে চান চিকিৎসক-শিক্ষক, কেউবা উদ্যেক্তা-গবেষক, আবার কারও স্বপ্ন প্রযুক্তিতে সাফল্য আনা। টেকনোলজি, মহাকাশ, সমুদ্রের অজানা তথ্যও বের করে আনতে চান অনেকে।

বলছিলাম সদ্য মাধ্যমিক পাস করা একদল কিশোর-কিশোরীর কথা। গতকাল বুধবার (২২ মে) চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের বড়পুলস্থ সিটি হল কনভেনশন সেন্টারে বিএসবি ফাউন্ডেশনের আয়োজিত সংবর্ধনায় জড়ো হন তারা। তারা একে একে জানান নিজেদের শিখরে ওঠার স্বপ্নের কথা। কল্পনা কিংবা গল্পতে নয়, স্বপ্ন রূপায়িত করতে চান বাস্তবে। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে বিএসবির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত প্রেরণার উৎস বলেও মনে করছেন তার।

তাসফিয়া জান্নাত নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি এসএসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছি। এখানে এসে একসাথে অনেক জনকে দেখে ভালো লাগছে। ছোট থেকে বাবা বলে আসছেন চিকিৎসক হওয়ার কথা। আমারও ইচ্ছে ভালো চিকিৎসক হওয়ার। সেজন্য এখন থেকে ভালো করে পড়ছি। আশা করি একদিন স্বপ্ন পূরণ হবে।

মোবাইল-কম্পিউটারের প্রতি বাড়তি ঝোঁক কিরণের। দিনের বেশিরভাগ সময় গেমস, ইন্টারনেট ব্রাউজিং বা কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকলেও পড়াশোনা বাদ যায় না। সময়মতো পড়াশোনা করায় ভালো রেজাল্টও হয়েছে। নিজের পছন্দের কাজের সাথে মিল রেখে হতে চান কোন প্রোগ্রামার কিংবা জড়াতে চান কম্পিউটার রিলেটেড কোন কাজে। আর সেই লক্ষ্যে পড়াশোনা করতে চান দেশের বাহির থেকে।

শিখরে ওঠার স্বপ্ন ওদের 1

তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে সংবর্ধনার পাশাপাশি সামনে কিভাবে পড়বো, কিভাবে বিদেশে যাওয়া যাবে সেসব বিষয়ে ধারণা পেলাম। আশা করি একদিন আমার স্বপ্ন পূরণ হবে।

একই রকম হাজার স্বপ্ন নিয়ে এদিন জড়ো হন অসংখ্য শিক্ষার্থী। তাদের কেউ কেউ প্রকাশ করেন নিজেদের স্বপ্নের কথা আবার কেউ কেউ আড়ালেই রাখতে পছন্দ করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, বিএসবির এই সংবর্ধনা তাদের চলার পথে বাড়তি উৎসাহ দিবে। ভালো ফলাফলের স্বীকৃতি পাওয়ায় উৎসাহ উদ্দীপনার কথাও জানান তারা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কনভেনশন সেন্টার কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ফুলের মাধ্যমে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। তারপর বিভিন্ন প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার ধারণা দেওয়া হয়। সেই সাথে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, খরচসহ যাবতীয় বিষয় আলোচনা করা হয়। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। পুরো আয়োজন যেমন ছিলো শিক্ষামূলক তেমনি পূর্ণ ছিলো উৎসাহ উদ্দীপনায়।

আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, সারদেশে মাধ্যমিক এসএসসি এবং সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৫০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দিচ্ছে বিএসবি ফাউন্ডেশন। সংবর্ধনায় অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীর জন্য থাকছে স্কলারশিপ, মেডেল ও সার্টিফিকেট। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার ১৫টি পৃথক ভেনুতে ১৮ মে থেকে ৮ জুন পর্যন্ত চলছে এই সংবর্ধনা। সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীরা এসএসসি পাসের পর দেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি, ইউনিভার্সিটি ফাউন্ডেশন প্রোগ্রামে ভর্তি, বিদেশে স্কুল-কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির তথ্য সম্পর্কে জানতে পারছেন।

শিখরে ওঠার স্বপ্ন ওদের 2

বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের চেয়ারম্যান লায়ন এম কে বাশার বলেন, প্রতি বছর অসংখ্য শিক্ষার্থী মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করছেন। এর পরে তারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিংবা মেডিকেলে পড়াশোনার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু শিক্ষার্থীর তুলনায় আসন সংখ্যা কম হওয়ায় অনেকে কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে পড়তে পারেন না। আমরা শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার পাশাপাশি উচ্চশিখ্ষা বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি এসব পরামর্শ শিক্ষার্থীদের জীবন চলতে সহায়ক হবে।

তিনি বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষার্থীদের উচিত পড়াশোনায় মনযোগী হওয়ার সাথে সাথে মানবিক কাজগুলোও করা। এতে করে যেমন শিক্ষার্থীরা সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে তেমনি দেশের জন্যও অমূল্য সম্পদে পরিণত হবে।

তিনি বলেন, অর্থ কুক্ষিগত করে না রেখে নিজের জন্য কিংবা অন্যের জন্য খরচ করুন। এতে করে যেমন আত্মিক শান্তি মিলবে তেমনি সমাজও দেশের উন্নয়ন হবে। আমাদের অনেকে আছি অর্থের কথা চিন্তা করে সন্তানদের ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াতে চাই না। এতে করে সম্ভাবনা থাকা সত্বেও অনো সন্তান পিছিয়ে পড়েন। অভিভাবকদের এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, তোমরা এখনও নবীন। সবে জীবনের চলা শুরু। আর শুরুতে যাতে কোন ভুল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। আলসেমি করলে পিছিয়ে পড়াদের কাতারে সামিল হতে হবে তাই পরিশ্রমের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যাব না।

শিখরে ওঠার স্বপ্ন ওদের 3

প্রসঙ্গত, ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ (বিএসবি) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শান্তির জন্য শিক্ষা, আত্মনির্ভরশীলতা ও বৈশ্বিক সুযোগ- এ শ্লোগান নিয়ে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সুশিক্ষায় শিক্ষিতকরণের লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে।

বর্তমানে দেশের পাঁচটি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ১৫টি ক্যাম্পাসে ক্যামব্রিয়ান কলেজের পাঠদান অব্যাহত আছে। ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে ক্যামব্রিয়ারে পথ চলা শুরু। রাজধানী ঢাকার মতো চট্টগ্রামের হালিশহরেও রয়েছে ক্যামব্রিয়ানের ডিজিটাল ক্যাম্পাস। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চট্টগ্রাম ক্যামব্রিয়ান কলেজ ফলাফলের দিক থেকে এই বোর্ডের অন্যতম শীর্ষ কলেজ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।