শিশু আরাফ হত্যায় ৩ জনের ফাঁসির আদেশ

চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরে পানির ট্যাংকে ফেলে দুই বছরের শিশু আবদুর রহমান আরাফকে হত্যার দায়ে তিন আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১৮ মে) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জসিম উদ্দিন এই রায় ঘোষণা করেন।

বিষয়টি চট্টগ্রাম খবরকে নিশ্চিত করেন আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য।

দণ্ডিতরা হলেন- মো. ফরিদ, মো. হাসান ও হাসানের মা নাজমা বেগম। রায়ের সময় আসমিরা উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়।

এর আগে ২০২০ সালের ৬ জুন চট্গ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

আরাফের বাবা একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির কর্মচারী আবদুল কাইয়ুম বলেন, “ঘটনার দিন বিকেলে আমার স্ত্রী ছেলেকে ঘরের সামনের পার্কিংয়ে চানাচুর খাওয়াচ্ছিল। চানাচুর খাওয়ার পর ছেলে পানি খেতে চায়। পানি আনতে ওর মা ঘরের ভেতর যায়। ফিরে এসে দেখে সেখানে ছেলে নেই।”

হত্যার পর ভবনটির বাসিন্দা নাজমা বেগম, তার ছেলে বাড়ির দারোয়ান হাসান ও তাদের পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তখন নাজমা বেগম আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে প্রতিবেশীর শিশুকে আদর করার ছলে ঘটনার দিন বিকালে ভবনের ছাদে নিয়ে গিয়ে পানির টাংকিতে ফেলে হত্যা করা হয়।

নাজমা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানায়, ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অর্থের লোভ এবং পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদের প্রলোভনে বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

এ ঘটনার সময় নাজমার ছেলে ভবনটির দারোয়ান মো. হাসান (২৩) গেইট খুলে দিয়ে তাকে ছাদে উঠতে সহায়তা করেছিলেন।

১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলম মিয়া ছিলেন আটতলা ভবনটির মালিক। তাকে ‘মামলায় ফাঁসাতে’ ওই ভবনের বাসিন্দা কোনো শিশুকে হত্যা করতে নাজমাকে ২০ হাজার টাকার প্রলোভন দেয় ফরিদ।

ফরিদ বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারী ছিলেন। ঘটনার আগে কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভবন মালিক নুরুল আলম মিয়ার প্রচারণায় হামলায় ঘটনায় ফরিদকে আসামি করা হয়। একারণে ক্ষুব্ধ ছিলেন ফরিদ।

এর আগে গত ৩০ মার্চ এ মামলায় রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত থাকলেও সেদিন বিচারকের ব্যস্ততার কারণে তা পিছিয়ে নতুন দিন ঠিক করা হয়েছিল ২৮ এপ্রিল। কিন্তু এক আসামি শিশু আরাফের বাবা-মায়ের ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করলে রায় পিছিয়ে যায়।

সেই আবেদন নাকচ করে বিচারক তিন আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে বুধবার রায় দিয়েছেন বলে জানান এ আদালতের এপিপি প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।