শেষ হলো লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের মহামিলনের বইমেলা

উৎসাহ-আমেজের মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ ২৮ দিন ধরে চলা অমর একুশে বইমেলার পর্দা নামলো আজ। মেলার শুরুর দিকে তেমন ভিড় না থাকলেও বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে প্রচুর ভিড় দেখা গেছে মেলা প্রাঙ্গণে। প্রতিদিন মেলা প্রাঙ্গণ পরিণত হতো লেখক, পাঠক আর প্রকাশকদের মিলনমেলায়। হয়েছে বেচা-বিক্রিও।

শেষ দিন মঙ্গলবারও (২৮ ফেব্রুয়ারি) ছিলো লেখক-প্রকাশকদের বাড়তি ব্যস্ততা। শেষ দিনে এসে মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় করেন অতিরিক্ত দর্শনার্থী। যা মেলার শোভা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এদিন নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম চত্বরে বইমেলা মঞ্চে চিত্রাঙ্কনসহ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ, অমর একুশ বইমেলা ২০২৩-এ অংশগ্রহণকারী ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রকাশকদের সনদ প্রদান ও সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ স্টলকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

সরজমিনে দেখা গেছে, শেষদিনে মেলায় ভিড় জমিয়েছেন অসংখ্য বইপ্রেমী। ছোট-বড় সবাই শেষ মহূর্তে এসে নিজের প্রিয় লেখকের পছনেদর বইটি কিনে নিচ্ছেন। এদিকে লেখকরাও ব্যস্ত সময় পার করেছেন পাঠকদের সাথে।

অমর একুশে বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বই মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বই পড়া ছাড়া মানুষের জীবন কখনো সমৃদ্ধ হয়না। যারা পৃথিবী বদলে দিয়েছে মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে, সাহিত্য বদলে দিয়েছে, পৃথিবীর মানচিত্র বদলে দিয়েছে তারা সবাই বই পড়ার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আগে পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরী ছিল, মানুষ গো গ্রাসে বাই পড়তো। এখন তরুণ ও কিশোরদের মধ্যে সেই অভ্যাস নাই।

তিনি আরও বলেন, বই পড়ার অভ্যাসটা কেড়ে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মোবাইল ফোনের আসক্তি। এটা বড় যন্ত্রনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা যাই ছাত্রছাত্রীরা বই পড়ার চেয়েও মোবাইল ফোনের আসক্তিতেই মগ্ন। এখান থেকে আমাদের কিশোর তরুনদের রক্ষা করতে হবে। বই পড়ার ওপর জোড় দিতে হবে। না হয় আমরা ভবিষ্যতে এমন একটি প্রজন্ম পাব, যেই প্রজন্ম হয়তো প্রযুক্তিতে অনেক সমৃদ্ধ হবে জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবেনা। প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হওয়া আর জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবার মাঝে পার্থক্য আছে। সেজন্য বইমেলার আয়োজন এবং মানুষের পাঠ অভ্যাস পুনরুদ্ধার করা এটি অত্যন্ত প্রয়োজন।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী আগামীতে এই বইমেলাকে আরও বড় পরিসরের আয়োজনের জন্য মঞ্চনাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সংযুক্ত করার পরামর্শ দেন।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণীজন অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা এমপি, বক্তব্য রাখেন অমার একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী শেখ মো. তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি) আবদুল মালেক, কাউন্সিলর ছালেহ আহম্মদ চৌধূরী, মো. আবদুস সালাম মাসুম, পুলক খাস্তগীর, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শাহীন আকতার রোজী, রুমকি সেনগুপ্ত, হুরে আরা বেগম।

আরও উপস্থিত ছিলেন চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম, শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা, উপ-সচিব আশেক রসুল চৌধুরী (টিপু), জনসংযোগ ও প্রটোকল কর্মকর্তা আজিজ আহমদ, সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সভাপতি মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, সাধারণ সম্পাদক আলী প্রয়াস।

প্রসঙ্গত, এবারের মেলার অনুষ্ঠানমালায় ছিল নজরুল দিবস, মাতৃভাষা দিবস-২১ ফেব্রুয়ারি, লোক উৎসব, রবীন্দ্র উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমি উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। চট্টগ্রামের বইমেলায় সারাদেশের ১০৮টি প্রকাশনী তাদের বই নিয়ে ১৫০টি স্টলে হাজির হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।