শ্রমিক সংকট : মিরসরাইয়ে কাঁচি হাতে ধান খেতে ত্রিপুরার মহিলারা

মিরসরাইয়ে মাঠে মাঠে পাকা ধান নিয়ে ব্যস্ত কৃষকরা। বলতে গেলে পাকা বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহোৎসব চলছে পুরো উপজেলায়।

এদিকে, গত ২ দিন ঘৃর্ণিঝড় ‘আসানি’র কারণে বৈরি আবহাওয়ায় পাকা ধান নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

অন্যদিকে শ্রমিক সংকটের ফলে উপজেলার বিভিন্নস্থানে দেখা গেছে ত্রিপুরা মহিলা শ্রমিকদের দিয়ে পাকা ধান কাটছেন কৃষকরা। বুধবার (১১ মে) উপজেলার মিরসরাই সদর ইউনিয়নের মজহারুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের মাঠে প্রায় ২০ জন ত্রিপুরা মহিলা শ্রমিক ধান ক্ষেত থেকে ধান কেটে কৃষকদের বাড়ীতে পৌঁছে দিচ্ছেন।

উপজেলার ইচাখালি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে গেয়ে দেখা যায়, চরাঞ্চলের কৃষকরা ক্ষেত থেকে ধান কেটে কাঁধে নিয়ে খালের হাঁটুু-কোমর পানি ভেঙে তুলছেন বাড়ির উঠানে।

গ্রামাঞ্চলগুলোতে গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের সেই চিরাচরিত দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। ধান মাড়াইয়ের সেই স্থান দখল করেছে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত মাড়াই মেশিন। এতে অবশ্য কৃষকের পরিশ্রম ও খরচ দু’টোই কমেছে। ধান কেটে খবর দিলেই ভ্রাম্যমাণ ধান মাড়াই মেশিন কৃষকের বাড়িতে চলে যাচ্ছে। এরপর ধানের বোঝা মেশিনে দিলেই খড় ও ধান আলাদা হয়ে বের হচ্ছে।

মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ভ্রাম্যমাণ ধান মাড়াই মেশিনের মালিক আব্দুল মুমিন জানান, এক বিঘা (৩৩ শতক) জমির ধান মাড়াই করতে সময় লাগছে এক ঘণ্টা। আর এর জন্য খরচ নিচ্ছি ৭০০ টাকা। এতে কৃষকের সময় ও খরচ দু’টোই কম হচ্ছে।

শ্রমিকের বিষয়ে উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক প্রিয়নাথ জানান, শ্রমিক সংকটসহ মজুরি বেশি হওয়ায় এলাকার কৃষকরা মাড়াই মেশিনের দিকেই ঝুঁকছে। এক বিঘা জমির ধান কৃষি শ্রমিক দিয়ে মাড়াই করতে আগে দু’দিন সময় লাগার পাশাপাশি খরচ হতো কমপক্ষে এক হাজার ২০০ টাকা। আর এখন সময়ও কম লাগছে, কমে গেছে পরিশ্রম।

উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কৃষক হানিফ জানান, শ্রমিক সংকটের কারণে পাকা ধান কাটতে পারছি না। ১ বিঘা (৩৩ শতক) জমির ধান কাটতে ৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হচ্ছে, তারপরও শ্রমিক পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে জেলার বাইরে থেকে শ্রমিক এনে ধান কাটতে হচ্ছে। এতে দৈনিক খাবারসহ ৮০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে।

উপজেলার মিরসরাই পৌরসভার নাজিরপাড়া গ্রামের কৃষক নিজাম উদ্দিন জানান, এবার তিনি ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে এবং অধিকাংশ ধান পেকে গেছে। ইতিমধ্যে তার জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে।

কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আসানি আঘাত হানার আগে সব ধান ঘরে তুলতে পারবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, এবার উপজেলায় ১৮ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলার অর্ধেকের বেশি কৃষক তাদের জমির ধান বাড়ি তুলেছেন। মহিলা ত্রিপুরারা প্রত্যেক বছর উপজেলার করেরহাটে ইউনিয়নে ধান কাটে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুর রহমান বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসের প্রেক্ষিতে দ্রুত ধান কেটে ফেলতে কৃষকদের প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে অনুরোধ করা হয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।