শ্লীলতাহানির ঘটনা ধামাচাপা দিতে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ

মিরসরাইয়ে ডাক্তারের বিরুদ্ধে নার্সের শ্লীলতাহানির অভিযোগ, পাল্টাপাল্টি মামলা

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নার্সের শ্লীলতাহানির অভিযোগে বড়তাকিয়া চক্ষু হাসপাতালের মো. জসীম উদ্দিন নামে এক চিকিৎসককে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্তের স্ত্রী বাদি হয়ে মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মাসুদ করিমসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে হাসপতালে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।

গত সোমবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী নার্সের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মিরসরাই থানায় মামলা দায়ের হলে পুলিশ অভিযুক্তকে আটক করে। এর আগের দিন রোববার ৬ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে ওই চিকিৎসকের স্ত্রী পাল্টা মামলা দায়ের করেছিলেন।

বড়তাকিয়া চক্ষু হাসপাতালের ওই নার্স মামলায় অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের মালিক ডাক্তার মো. জসীম উদ্দিন গত ৬ আগস্ট তাকে নিজ কক্ষে ডেকে পাঠান। এসময় হাসপাতাল প্রায় লোকজন শূন্য ছিল। তিনি কক্ষে গেলে মো. জসীম উদ্দিন হঠাৎ দরজা বন্ধ করে দিয়ে জোরপূর্বক শরীরে স্পর্শ করে এবং শ্লীলতাহানি করে। ভুক্তভোগী নার্স কক্ষ থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে বিষয়টি তার খালাতো ভাই নুর হাসান ও প্রতিবেশী মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ করিমকে জানান।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর মালিক মো. জসীম উদ্দিন হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে ফের গত শনিবার (১৩ আগস্ট) হাসপাতালে আসে। মো. জসীম উদ্দিন হাসপাতালে আসার খবর পেয়ে নার্সের খালাতো ভাই নুর হাসান, মাসুদ করিমসহ কয়েকজন গিয়ে তার সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু সমাধানে ব্যর্থ হলে তারা ওই নার্সকে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কেউ চাঁদা চায়নি— এমন বিষয় উল্লেখ করে ভুক্তভোগী নার্স আরও বলেন, অভিযোগ নিয়ে থানায় আসার আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. মো. জসীম উদ্দিনের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ করিমসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা দিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করতে চেয়েছিল, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কেউ চাঁদা চায়নি। শ্লীলতাহানির ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওই অভিযোগ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন ভুক্তভোগী।

এইদিকে চাঁদাবাজির মামলায় ওই চিকিৎসকের স্ত্রী সাবিনা ইয়াছমিন অভিযোগ করেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মো. তুরিন, ইউছুপ, মাসুদ করিম, আবিব, সোহেল, হাসান তার স্বামী মো. জসীম উদ্দিনকে জোরপূর্বক হাসপাতালের একটি কক্ষে আটকিয়ে রেখে হাসপাতালের অভ্যর্থনা ডেস্কে থাকা এক নার্সকে ত্রিশ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করতে চাপ প্রয়োগ করে। তারা ওই নার্সকে তার স্বামীর সাথে জড়িয়ে দিয়ে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। বিয়ে না করলে ঘটনার মিমাংসার জন্য সাত লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মাসুদ করিম বলেন, হাসপাতালের মেয়েটি শ্লীলতাহানির বিষয়ে আমাকে জানায়। পরে কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এখন উল্টো আমার বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।

এইদিকে খৈইয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের হাসপাতাল এলাকার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোপাল চৌধুরী বলেন, শ্লীলতাহানির শিকার ওই মেয়েটি আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সোমবার রাতে ঘটনাটি ওই মেয়ের কাছ থেকে জেনেছি। তখন বিষয়টি নিয়ে এতই জটিলতার সৃষ্টি হয় আমার কিছু করার ছিল না। হাসপাতালে চাঁদাবাজির অভিযোগটি সত্য নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এবিষয়ে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন বলেন, বড়তাকিয়া চক্ষু হাসপাতালের একটি ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষই দুইটি মামলা করেছে। শ্লীলতাহানির অভিযোগ হাসপতাাল মালিক মো. জসীম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। দুইটি অভিযোগই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।