সড়ক সংস্কারের নামে দু বছর ধরে চলছিলো খোঁড়াখুঁড়ি। ইট, বালি, পাথর ও ময়লার স্তুপ দেখে মনে হবে এ যেন সড়ক নয়, বিধ্বস্ত কোন দেশের ধ্বংসস্তূপ। আর সে ধ্বংসস্তূপে সদর্পে রাজত্য করছে ধুলো-বালি। বলছিলাম চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের এস.আলম সুগার মিল থেকে খোয়াজনগর হাফেজ মনির উদ্দিন সড়কের দুর্দশার কথা। এদিকে সড়কটি খুঁড়ে রেখে কাজ সম্পন্ন না করেই উধাও হয়েছে প্রকল্পের ঠিকাদার। যার কারণে সড়কটি হয়ে পড়েছে যান চলাচলের অনুপযোগী। এতে করে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
সোমবার (৬ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খোয়াজনগর ও ইছানগর এলাকাকে সংযুক্ত করা জনগুরুত্বপূর্ণ হাফেজ মনির আহমদ সড়কটি সংস্কারের কার্যাদেশ পেয়েই মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজ সড়কটি খুঁড়ে ফেলে। পরে সড়কের পাশে বালু তুলে রাখে। এরপর নতুন করে আর কোনো কাজ তারা করেনি। ফলে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ কয়েকটি শিল্প কারখানার ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে বাতাসে উড়ছে মাত্রাতিরিক্ত ধুলো-বালি। এতে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন।
স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের আইআরআইডিপি-৩ প্রকল্পের অধীনে এস আলম সুগার মিল থেকে খোয়াজনগর হাফেজ মনির উদ্দিন পর্যন্ত ১ হাজার ৮ মিটার সড়কে কালভার্টসহ পাকাকরণের জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই দরপত্রে সর্বনিম্ন দরপত্রদাতা হিসেবে ৩ কোটি ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬৮ টাকায় কাজ পায় চট্টগ্রাম নগরীর মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছেন না। এলজিইডি চিঠি দিয়েও হাজির করাতে পারছেন না তাদের। সর্বশেষ গত ১৬ আগস্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বুঝে নিলেও পরে কাজ ফেলে উধাও হয়ে যায়।
এরমধ্যে ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা এলজিইডি অফিসের তৎকালীন প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা কাজ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে নিপা এন্টারপ্রাইজকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, প্রথম চিঠি পাওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কোনো কাজ করেনি। পরে চুক্তি বাতিলের পত্র দেওয়া হয়। এরপর ১৬ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি এলজিইডি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে কাজ বুঝে নেয়। সড়ক নির্মাণে একপাশে আংশিক গাইড ওয়ালের কাজ করার পর আবারও কাজ বন্ধ রাখে তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহ্ আলম বলেন, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সড়কটি পাকাকরণের জন্য খনন কাজ করেন ঠিকাদারের লোকজন। কিন্তু আর কোনো কাজ করেননি। সড়কের প্রায় আশিভাগ কাজই পড়ে আছে। তাই বর্ষায় বৃষ্টিপাত শুরু হলে খুঁড়ে রাখা সড়কটির মধ্যে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। কাঁচা সড়কটি কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। এখন পানি না থাকলেও সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। তাই বিগত এক বছর ধরে রিকশা-ভ্যান চলাচল বন্ধ আছে। এতে করে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। এছাড়া গ্রামের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসায় মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কর্ণফুলী উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহিদুল আলম চৌধুরী বলেন, আমি মাত্র যোগদান করেছি এ উপজেলায়। সড়কটির বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।