সন্দ্বীপ নৌ-রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদে আয়োজিত মোটর সাইকেল র্যালিতে বাধা দেওয়ার পর সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন এবং সন্দ্বীপ থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ দাযের করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ মার্চ) এই র্যালির ডাক দিয়েছিলো অনলাইনে সক্রিয় তরুন সমাজ।
বিকাল তিনটায়ে উপজেলা প্রশাসন মাঠ থেকে এই র্যালি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর থেকে কয়েক প্লাটুন পুলিশ ওই মাঠ ঘিরে অবস্থান নেয়। এসময় র্যালিতে অংশগ্রহণ করতে আসা তরুণদের শতাধিক মোটর সাইকেলে আটক করে পুলিশ।
পরে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহমেদ খানের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে র্যালির আয়োজকরা তাদের লিখিত বক্তব্য উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা সম্রাট খীসার কাছে পেশ করেন।
রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদুল মাওলা কিশোরের নেতৃত্বে প্রদত্ত এই লিখিত বক্তেব্যে বলা হয়েছে, সরকারের সবগুলো সংস্থার অগচোরে সম্প্রতি ইজারাদার স্পীড বোটের ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। কোন ধরনের নিয়ম- নীতি না মেনে ইজারাদার তার খেয়ালখুশি মত ভাড়া আদায় করছে, যা প্রকারন্তরে এক প্রকার চাঁদাবাজি।
আন্দোলনকারী তাদের লিখিত বক্তেব্যে মোট আটটি অভিযোগের বিষয় উল্লেখ করেছেন। অভিযোগগুলো হচ্ছে,
১. দেশের সবগুলো ফেরীঘাটে ভাড়ার তালিকা সাইনবোর্ড আকারে প্রদর্শন করা হলেও কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটে তেমন কিছু কখনো দেয়া হয়নি।
২. স্পীড বোটে মালের ভাড়ার কোন নিয়ম নেই, কাউন্টারের লোকেরাই তাদের খেয়াল-খুশি মতো ভাড়া ঠিক করে।
৩. দুই পাশের জেটিতে মাত্র ৩/৪ মিনিটের ভ্যানের ভাড়া যাত্রী প্রতি ২০/২৫ টাকা আদায় করা হয়। তাছাড়া যাত্রীদের সাথে মালপত্র থাকলে ইজারাদারের নিযোগকৃত ভ্যান চালক যা খুশি টাকা আদায় করে।
৪. লেবাররা ইচ্ছা অনুযায়ী টাকা আদায় করার জন্য যাত্রীদের সাথে চরম দূর্বব্যহার করে। কখন বোট ছাড়বে আর কখন ছাড়বেনা পূর্ব থেকে সেই ঘোষণা দেয়া হয়না।
৫. কুমিরা থেকে চট্টগ্রাম শহর পযন্ত যে কার সর্ভিস আছে তা থেকেও অতিরিক্ত টাকা আদায় করে। একটি কারের প্রতিটি ট্রিপ থেকে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে নেওয়া হয়। এখানে যাত্রীদের কাছ থেকে যে ভাড়া আদায় হয় তাও খেয়াল খুশি মত।
৬. মালামাল পরিবহণের ক্ষেত্রে আরো বেশি অরাজকতা চলছে। চাকতাই থেকে সন্দ্বীপ পর্যন্ত একটি ৫০ কেজি ওজনের বস্তার ভাড়া যেখানে ২৫-৩০ টাকা সেখানে দশভাগের একভাগ দূরত্বের কুমিরা-গুপ্তছড়া রুটের ভাড়াও আদায় হয় ৩০ টাকা। অথচ এখানে বস্তা প্রতি মাসুল ১০-১৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
৭. কুমিরা খালে তারা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের বোট/ট্রলারকে মালামাল পরিবহণ করতে দেয়না।
৮. গুপ্তছড়া ঘাট থেকে একটি মহলের নির্ধারিত ট্রাক ছাড়া অন্য ট্রাক সহজে সিরিয়াল পায়না।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মোহাম্মদ খাদেমুল ইসলাম, হাসান আল নাহিয়ান, মাইনউদ্দিন আকাশ ও মোহাম্মদ রুস্তম।
অভিযোগ গ্রহণ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা সাংবাদিকদের বলেন, এই বিষয়ে শীঘ্রই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। র্যালি আয়োজনে বাধা প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শনিবার স্বাধীনতা দিবস পালনের জন্য প্রশাসন ব্যস্ত রয়েছে, যার কারণে এই র্যালির অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে, তাদের লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে র্যালির আয়োজকদের পক্ষ থেকে একই অভিযোগ দায়ের করা হয় সন্দ্বীপ থানায়।
রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল মাওলা কিশোর বলেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিবাদী মোটর সাইকেল র্যালি স্থগিত করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রশাসন কুমিরা-গুপ্তছড়া রুটে বে-আইনী অর্থ আদায়সহ সকল অনিয়ম দূর না করলে আবারো কর্মসূচি দেয়া হবে।
তিনি র্যালিতে অংশগ্রহণের জন্য সমগ্র সন্দ্বীপ থেকে আসা তরুনদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মনোবল ধরে রেখে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌ-রুটের অনিয়ম দূর না হওয়া পযন্ত আমরা ঘরে ফিরবোনা।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে র্যালির বিষয়ে সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতাকে বিস্তারিত অবহিত করা হয়। এসময় তিনি আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি নিজের সমর্থন ব্যক্ত করেন বলেন আমি এ বিষয়ে অবগত। আমি বিষয়টা অফিসিয়ালি দেখতেছি।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।