সবুজ পাহাড়ে বেড়ে ওঠা সেনাসদস্য মেরাজ—ফুটবলে বাজিমাত

গাঁয়ের আট-দশটা ছেলের মতোই বেড়ে ওঠা মেরাজের। সাধারণ এক পরিবারের ছেলে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মাঠে খেলার সুযোগ পাওয়া তো দূরের কথা। কোনো দিন ভেতরটা ঘুরেও দেখার সুযোগ পাননি সেনাবাহিনী ফুটবল দলের ফরোয়ার্ড মেরাজ প্রধান। সেই ছেলে কিনা ভারতের কলকাতার সল্টলেক সিটির যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনের মাঠে ইস্ট বেঙ্গলের জালে গোল করে চমকে দিলেন।

ফুটবল বলতে সেনাবাহিনীর আন্তঃইউনিট টুর্নামেন্ট খেলেছেন। সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন। এটুকুই তার ফুটবল অভিজ্ঞতা। সেই ছেলে ডুরান্ডকাপ ফুটবলে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের বিপক্ষে গোল করলেন। নিজেদের দেশের কোনো লিগেও খেলেননি। ঢাকার কোনো লিগে খেলা কিংবা রাঙামাটির লংগদু এলাকার কোনো অখ্যাত দলেও খেলেননি মেরাজ প্রধান। সরাসরি আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে নেমেই গোল করলেন।

গত শনিবার সল্টলেকের মাঠে ইস্ট বেঙ্গলের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে পিছিয়ে সেনাবাহিনী। ৮৮ মিনিটে সেনাবাহিনীর শাহরিয়ার ইমন গোল করেন। ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়ে নেমে ইনজুরি টাইমে গোল করেন মেরাজ প্রধান। ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান এই তরুণ। ইস্ট বেঙ্গলের সমর্থকরা মুহূর্তেই হতাশ হয়ে পড়েন। যে ছেলেটা কোনো দিন নিজের ঘরের মাঠে খেলতে পারেনি সেই ছেলেটাই কিনা ভারতের মাটিতে এসে লাল-হলুদের ঘরে গোল করল। সল্টলেক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অনেকের মুখের কথা ছিল এটি।

খেলার শেষ বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে মেরাজ প্রধান ডাগআউটে কোচ আব্দুর রাজ্জাককে অনুরোধ করে বলে ছিলেন তিনি নামতে চান। শেষ মুহূর্তে কোনো আশা নেই। তারপরও একটা সুযোগ চেয়ে কোচের কাছে অনুরোধ করেন মেরাজ।

কোচ রাজ্জাক বললেন, ‘আমাকে অনুরোধ করে, সে নামতে চায়। আমারও কনফিডেন্স ছিল।’ আব্দুর রাজ্জাক বললেন, ‘আমরা চার জন নতুন ফুটবলার মাঠে নামিয়েছিলাম। যারা কখনো কোনো ক্লাবেই খেলেনি। এরাও সেনাবাহিনীর তৈরি করা ফুটবলার।’

খেলাটা যখন শেষের দিকে তখন ইস্ট বেঙ্গলের ১০ ফুটবলার। তারপরও দোর্দণ্ডপ্রতাপে খেলছিল সেনাবাহিনী। স্প্যানিশ কোচিং স্টাফের সঙ্গে স্প্যানিশ ফুটবলার, অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলার, ভারতীয় জাতীয় দলের তিন ফুটবলার খেলেছেন। ৩০ কোটি টাকার দল। নতুন স্পন্সর পেয়েছে ইমামি। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ফুটবলারদের পক্ষে সমানতালে লড়াই করে পেরে উঠার কথা না। তারপরও বাঘের মতো লড়াই করার চেষ্টা করেছে। যা দেখে কলকাতার সাংবাদিকরাও চোখ কপালে তুলেছিলেন। প্রেসবক্সে বসে যারা বাংলাদেশের দলটাকে নিয়ে শঙ্কায় ধুঁকছিলেন তারাই ম্যাচ শেষে ভালো কথাও বলেছিলেন। জানতে চাইছিলেন মেরাজের পুরো নামটা।

সৈনিক পদে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন রাঙামাটির লংগদু উপজেলার ৪নম্বর বগাচতর ইউনিয়নের ২নম্বর গাউসপুর ওয়ার্ডে মোহাম্মদ হোসেন ও আনোয়ারা বেগম শিল্পী দম্পত্তির সন্তান মেরাজ প্রধান। ২০২১ সালে ফুটবল খেলতে শুরু করেন। বাবা মোহাম্মদ হোসেন আবুধাবী থাকেন। মা গৃহীনি। ছোট ভাই ইমন প্রধান বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি করেন, ছোট বোন মেঘলা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
মেরাজ প্রধান ইস্ট বেঙ্গলের নাম শুনেছেন কিন্তু দেখেননি। এবার দেখলেন। দেখেই জয় করলেন। সুনাম অর্জন করলেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।