চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও ঢাকা স্টেট পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি দোস্ত মোহাম্মদকে মারধর করেছে শাখা ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক খালেদ মাসুদসহ ১৪-১৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী। ভুক্তভোগী দোস্ত মোহাম্মদ বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
সোমবার (১৯ জুন) চায়ের দোকানে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ভোক্তভোগী ওই সাংবাদিকের মুখে গরম চা ঢেলে দেন ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক খালেদ মাসুদ। এসময় সাংবাদিক পরিচয় দিলে উল্টো বেধড়ক পেটে লাথি মারতে থাকেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত খালেদ মাসুদ, শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আরাফাত রায়হানসহ অন্যান্য জন ছাত্রলীগ কর্মীরা।
ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে আসা হলেও অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
মারধরকারীদের প্রত্যেকেই শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিএফসির অনুসারী বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ বলেন, সন্ধ্যায় স্টেশনে চা খেতে গিয়েছিলাম। ছাত্রলীগের খালেদসহ বেশ কয়েকজন বসে ছিলো সেখানে। একটি চেয়ার খালি থাকায় আমি সেটা নিয়ে আসার সময় খালেদ আমাকে বললো- ‘তুমি এটা কার অনুমতি নিয়ে নিচ্ছ?’ আমি খালেদকে আগে থেকে চিনতাম, ও আমাদের জুনিয়র। তাই বললাম ‘তুমি করে বলছো কেন? এরপর সে আমার সেশন জিজ্ঞেস করে। সেশন বলার সঙ্গে সঙ্গে তার হাতে থাকা গরম চা’সহ চায়ের কাপ আমার মাথায় মেরে দেয়।
তিনি আরও বলেন, এসময় আমি সাংবাদিক পরিচয় দিলে সে বলে ‘তুই সাংবাদিক হইছোস তো কি হইছে?’ এ কথা বলেই তার সঙ্গে থাকা ১০-১২ জন আমাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে তারা চায়ের কাপ দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করতে থাকে এবং পেটে লাথি মারতে শুরু করে। এর মধ্যে আরাফাত রায়হান বেশি মারধর করেছে। বাকিদেরও চিনি।
মেডিক্যালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শুভাশীষ চৌধুরী জানান, মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি বোমি করে, তাহলে সিটিস্ক্যান করানো লাগবে। এছাড়া রোগীর কিডনিতে সমস্যা থাকায় ধারণা করা হচ্ছে পেটে গুরুতর আঘাত পেয়েছে। ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে কি-না পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেকে পাঠানো হয়েছে।
প্রধান অভিযুক্ত চবি ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক খালেদ মাসুদ বলেন, চেয়ার নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল। পরে তিনি খারাপ ব্যবহার করায় হালকা ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। মারধর করা হয়নি।
জানতে চাইলে সিএফসির বর্তমান নেতা মির্জা খবির সাদাফ বলেন, চায়ের দোকানে টেবিলে বসা নিয়ে একজন সাংবাদিকের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে বলে শুনেছি৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখে যদি ছাত্রলীগের কারো অপরাধ প্রমাণ হয় তাহলে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করব।
জানতে চাইলে সভাপতি রেজাউল হক বলেন, সাংবাদিকের গায়ে হাত তোলা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অবহিত করব।
তিনি আরও বলেন, খালেদ মাসুদ, আরাফাত রায়হানসহ যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটিয়ে থাকে৷ আমি তাদের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করি বলে আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার কঠিন বিচার চাই।
এ বিষয়ে চবি প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদার বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে এসেছি। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগের ভিত্তিতে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেবো আমরা।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।