দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাক-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রবেশদ্বার হচ্ছে সীতাকুণ্ড। ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বিএনপির হরতালের সময় এই এলাকায় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা। মহাসড়কের এই অংশটি অবরোধের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর স্থবির হয়ে গেলে তার প্রভাব পড়ে সারাদেশের আমদানি-রপ্তানি খাতে। তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ আসলাম চৌধুরীর কার্যক্রমকে আগুন-সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করে। নানা অভিযোগে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তিনি প্রায় নয় বছর কারাগারে ছিলেন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর পাশাপাশি চট্টগ্রামের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন আসলাম চৌধুরী। কিন্তু সোমবার ঘোষিত বিএনপির প্রার্থীদের তালিকায় চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে আসলাম চৌধুরীর নাম নেই।
কেন্দ্রীয় এই নেতাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় সীতাকুণ্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা হতবাক হয়েছেন; ঘোষণা দেন আন্দোলনের। সোমবার রাতে তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় বিএনপি ইতোমধ্যে চারজনকে বহিষ্কার করেছে। তবে স্থানীয় বিএনপির দাবি, আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দিলে ইউনিয়ন-ওয়ার্ড কমিটির বিএনপির নেতাকর্মীরাও বহিষ্কৃত হতে সম্মত আছেন।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আসলাম চৌধুরী দলের সংকটময় সময়ে রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন বারবার। কিন্তু সেই ত্যাগের মূল্যায়ন হয়নি। বরং তাকে পাশ কাটিয়ে এমন একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যার সঙ্গে সীতাকুণ্ডের তৃণমূলের তেমন পরিচিতি নেই। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে।
এর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত সোমবার ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে বিএনপি। সীতাকুণ্ড আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। ওই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন আসলাম চৌধুরী।
কেন্দ্রীয় নেতা আসলাম চৌধুরী মনোনয়ন না পাওয়ায় মঙ্গলবার সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপি জরুরি সভা আহ্বান করে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. কমল কদরের সভাপতিত্বে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আসলাম চৌধুরীর মনোনয়নের দাবিতে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের পদধারী নেতাদের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি কেন্দ্রীয় বিএনপির দপ্তরে পাঠানো হবে।
উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুরসালীন বলেন, সীতাকুণ্ডের মাটি ও মানুষের সঙ্গে গেঁথে আছেন আসলাম চৌধুরী। আজকের সভা থেকে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কেন্দ্রকে আহ্বান জানাবো, এই আসনে আসলাম চৌধুরীকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হলে তা পূর্ণবিবেচনায় নিতে হবে। চট্টগ্রামের কোনো বিএনপি নেতা হিসেবে তিনি সর্বোচ্চ সময় কারাবরণ করেছেন। সীতাকুণ্ডে আসলাম চৌধুরীর বিকল্প কেউ নেই।
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ২০১২ সাল থেকে নানা অভিযোগে চারবার গ্রেপ্তার হন আসলাম চৌধুরী। তার নামে মোট ৭৬টি মামলা হয়, সর্বশেষ ২০১৬ সালের গ্রেপ্তারের পর তিনি টানা কারাভোগ শেষে গত বছরের আগস্টে মুক্তি পান। চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে বিএনপির গ্রুপিং রাজনীতি থাকলেও সীতাকুণ্ডে আসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে সবাই ছিলেন ঐক্যবদ্ধ। তবে মনোনয়ন বঞ্চনার ঘটনায় সেই ঐক্য এখন ভেঙে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, আসলাম চৌধুরী দলের সংকটময় সময়ে রাজপথে থেকে বারবার গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৮ বছর ৩ মাস ৫ দিন কারাভোগ করেছেন তিনি, যা চট্টগ্রামের কোনো রাজনীতিকের জন্য সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের বন্দিত্ব বলে দাবি নেতাকর্মীদের। দীর্ঘ কারাবাসে তার ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় নেতারা বলেন, আসলাম চৌধুরী শুধু নেতা নন, আন্দোলনের মুখ। তিনি থাকলে তৃণমূল সাহস পায়। এমন একজন নেতাকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া সীতাকুণ্ড বিএনপির কর্মীরা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না। এমনকি শেষ পর্যন্ত আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দিলে আসনটি বিএনপি হারাতেও পারে দাবি করছেন নেতাকর্মীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন আসলাম চৌধুরী। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে জিয়া পরিষদ গঠন করেই বিএনপির রাজনীতিতে আসেন আসলাম চৌধুরী। ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল তিনি উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হন। এর আগে, সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব হন। বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।



মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।