রোববার (৫ জুন) দুপুর ২টা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি কেয়ারের সামনের জটলা থেকে একটু দূরে ফুটপাথে বসে আছেন আমেনা বেগম। কাঠফাটা রোদে ঘেমে-নেয়ে একাকার। বাড়ি তার বাঁশখালী। ভাই আনোয়ার চাকরি করতো বিএম কন্টেইনার ডিপোতে। গত রাত থেকে ভাইয়ের সাথে পরিবারের যোগাযোগ নেই।
অন্যদের মতো তিনিও স্বজনের খোঁজে সেটা বোঝার পরও জানতে চাইলাম- কার অপেক্ষায় আছেন? পাশের প্রতিবেশী আরেক নারী জবাব দিলেন, উনি ভাইয়ের খোঁজে আসছেন বাঁশখালীর চনুয়া থেকে। ভাইকে পাচ্ছেন না। অশ্রু গড়ানো ছোখে আমেনা বেগম সম্মতি সূচক মাথা নাড়লেন।
জরুরী বিভাগে প্রবেশ করে দেখা গেলো আমির আলম নামে এক যুবক খোঁজ করছেন তার ভাই রবিউল আলমের। রবিউলের আরেক প্রতিবেশী রিদওয়ানকে খুঁজছে তার পিতা।
এভাবে স্বজন হারানোর শঙ্কায় শত চোখ খুঁজে ফিরতে তাদের রক্তের ধন- পিতা-পুত্র কিংবা ভাই-স্বজনদের।
বাঁশখালী থেকে সুজন নামে এক যুবক রাত থেকে তার ভাইকে খুঁজছিলেন। ভোরে চট্টগ্রাম খবরে ফোন করে জানালেন তাদের উদ্বেগের কথা। কোন কোন হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে সেই তথ্য জেনে তিনি শহরে এলেন ভাইয়ের খোঁজে। অবেশেষে পেলেন পার্কভিউ হসপিটালে। দুপুরে ফোন করে তিনি জানালেন, ভাইকে খুঁজে পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা।
এভাবে অপেক্ষা বাড়ছে কারো কারো। সাধারণের বাইরে খোদ ফায়ার ফাইটার পরিবারের সদস্যরাও আছেন অপেক্ষায়। কান্না করে বলছেন, আমাদের কিছুই লাগবে না, আমাদের ভাইয়ের মরদেহটি লাগবে। এই আহাজারী সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের নিহত ফায়ার ফাইটার সালাহ উদ্দীনের ভাই ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা কামাল উদ্দীনের।
নিহত সালাহ উদ্দীনের লাশ শনাক্ত করা যায়নি। তিনি ফেনী জেলার সদর থানার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু ইউসুফের ছেলে। সালাহ উদ্দীনের এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন।
রোববার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ১৫ জনের লাশ শনাক্ত করা গেছে। বাকিদের লাশ শনাক্ত করা যায়নি। তাদের মধ্যে সালাহ উদ্দীনও একজন।
লাশ শনাক্ততে সোমবার (৬ জুন) থেকে ডিএনএ পরীক্ষার শুরু হবে জানা গেছে। অপর দিকে এই ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান।
ভোর বেলা নিহতের সংখ্যা ৪ চাকলেও দিনের আলোর সাথে বাড়তে থাকে লাশের মিছিল। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেটা অর্ধশতে গিয়ে ঠেকে। মৃত্যুর মিছিল দির্ঘায়িত হতে পারে বলে আশঙ্কায় আছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।