সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসকদের জামিন, খুলছে প্রাইভেট চেম্বার

ঢাকার গ্রিন রোডস্থ সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে নবজাতকের মৃত্যু ও মায়ের জীবন মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার দুই চিকিৎসক জামিন পেয়েছেন। তাদের জামিনের পর চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন বন্ধ রাখার কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। আজ থেকেই চিকিৎসকেরা প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখবেন।

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) ঢাকা মেডিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেশন অব অল সোসাইটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সোসাইটি অব সার্জনসের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম।

লিখিত বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ও সোসাইটি অব মেডিসিনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, রাজধানীর গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হসপিটালে দুই চিকিৎসক ডা. মুনা সাহা ও ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা জামিনে মুক্তি পাওয়ায় চিকিৎসকদের আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। তাই আজ থেকে সারাদেশে চিকিৎসকের চেম্বার ও অস্ত্রোপচার শুরু হবে।

এর আগে, এদিন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান উদ্দিন সোহাগের আদালতে ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।

জানা গেছে, গত ৯ জুন সেন্ট্রাল হসপাতালের অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার (গাইনি) অধীনে ভর্তি হন মাহাবুবা রহমান আঁখি। কিন্তু সেদিন ডা. সংযুক্তা হাসপাতালেই ছিলেন না। পরে তার দুই সহযোগী ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহা আঁখির ডেলিভারি করানোর চেষ্টা করেন। সেটি হওয়ার পর আঁখির সন্তানের জটিলতা দেখা দেওয়ায় তাকে এনআইসিইউতে রাখা হয়। একই সঙ্গে আঁখির অবস্থার অবনতি হলে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

গত ১০ জুন বিকেলে আঁখির সন্তানের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী ধানমন্ডি থানায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর একটি মামলা দায়ের করেন ইয়াকুব আলী। মামলায় ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, ডা. মুনা সাহা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকেও আসামি করা হয়।

মামলা দায়েরের পর গত ১৫ জুন রাতে ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা সাহাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর গত ১৮ জুন দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাহবুবা রহমান আঁখিও। গ্রেপ্তারের পর গত ১৫ জুন ডা. শাহজাদীসহ দুজন আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ২১ জুন তাদের জামিন নামঞ্জুর হয়। এরপর সেই আদেশের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারি বিবিধ মামলায় জামিন চান ডা. শাহজাদী। সেই আবেদনও গত ১২ জুলাই নামঞ্জুর হয়।

এদিকে দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে সোম ও মঙ্গলবার সারাদেশে চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বার–অপারেশন বন্ধের ঘোষণার কথা জানায় অবস্ট্রেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনেকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)।

ঘোষণার পর সারাদেশের ন্যায় মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া বিভিন্ন টেস্টের নমুনা সংগ্রহ চালু থাকলেও বিশেষজ্ঞদের স্বাক্ষর ছাড়া রিপোর্ট সরবরাহ করতে পারেনি ল্যাবগুলো।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।