স্ট্রোক: কি, কেন, কীভাবে?

স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি রোগ। আমাদের মস্তিষ্কের রক্তনালীতে জটিলতার কারণে এই রোগ দেখা দেয়। রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে স্ট্রোক হয় এবং ব্রেইনের একাংশ অক্ষম হয়ে গেলে নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই স্ট্রোককে হার্টের রোগ মনে করেন, যা একদমই ভুল। এই ভুল ধারণার কারণে রোগীরা বাড়তি ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।

হার্টের রোগ মনে করার ফলে কেউ স্ট্রোক করলে তাকে হার্টের চিকিৎসক বা হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে করে মূল চিকিৎসা লাভে বিলম্ব হয় আর তখনই দেখা দেয় জটিলতা। তাই সকলের এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। হঠাৎ করে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে, হঠাৎ ব্ল্যাকআউট হলে, হাত-পা দুর্বল হয়ে পড়লে, মুখের কথা জড়িয়ে গেলে, সবশেষ জ্ঞান হারালে বুঝতে হবে স্ট্রোক হয়েছে। সেক্ষেত্রে, রোগীকে অতিসত্বর নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

স্ট্রোকের ফলে যদি রক্ত জমাট বাঁধে তবে তার সাড়ে ৪ ঘন্টার মধ্যে রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারলে ঝুঁকি অনেকটুকুই কমে যায়। তবে যদি ব্রেইনের ভেতর রক্তক্ষরণ হয় তাহলে ১ ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করলে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই সময়কে বলা হয় ‘গোল্ডেন আওয়ার’। আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোয় স্ট্রোক ম্যানেজমেন্ট সহজলভ্য করা অত্যন্ত জরুরি। হার্টের রোগীদের জন্য যেমন কোরোনারি কেয়ার ইউনিট বা সিসিইউ থাকে, তেমনি স্ট্রোকের রোগীদের জন্য প্রয়োজন স্ট্রোক ম্যানেজমেন্ট ফ্যাসিলিটি বা হাইপার অ্যাকিউট স্ট্রোক ইউনিট। এখানে রোগের ধরন, কার কেমন চিকিৎসা প্রয়োজন বা কার সার্জারি প্রয়োজন, সার্বিক পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়। সুতরাং, সংশ্লিষ্টদের স্ট্রোক ম্যানেজমেন্ট নিয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ-রক্তচাপ স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করে না, অথবা একটু সুস্থ অনুভব করলে বন্ধ করে দেয় তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া ধূমপান বা মাদক সেবন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি বা অতিমাত্রায় কোলেস্টেরলের উপস্থিতি, স্থূলতা বা অতিরিক্ত মোটা হওয়া, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ইত্যাদি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

অনেকের স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে প্যারালাইসিস হতে পারে। এক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি সহজলভ্য করতে হবে। দেশে দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে, দেশের প্রান্তির অঞ্চলগুলোয় এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় দিন দিন স্ট্রোকের হার বহু অংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেকোন বয়সেই স্ট্রোক হতে পারে। তাই সচেতনতা ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধাদি বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশকে স্ট্রোকের ভয়াবহতার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

লেখক:
সিনিয়র কনসালটেন্ট, নিউরোলজি বিভাগ, এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম।
ডা. হামিদুল হক ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন এবং বারডেম হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে প্রায় ৫ বছর কাজ করেন। যুক্তরাজ্যে ২০ বছরেরও বেশি কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তিনি হাইপারএকিউট স্ট্রোক কেয়ার এবং নিউরোরিহ্যাবিলিটেশন পরিচালনায় বিশেষজ্ঞ।

তিনি ইউরোপীয় স্ট্রোক সংস্থা (ESO), ইউরোপীয় সোসাইটি অফ নিউরোসোনোলজি অ্যান্ড সেরিব্রাল হেমোডাইনামিক্স (ESNSCH), ব্রিটিশ আইরিশ অ্যাসোসিয়েশন অফ স্ট্রোক ফিজিশিয়ানস (BIASP) এবং ইউরোপীয় সোসাইটি অফ মিনিমালি ইনভেসিভ নিউরোলজিক্যাল থেরাপি (ESMINT) এর সদস্য।

তাঁর সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন—ডা. হামিদুল হক

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।