হলের গায়ে জমেছে শ্যাওলা, নির্মাণ কাজ শেষ না হলেও প্রভোস্ট হয়েছেন ৩ জন

২০১৮ সালে শুরু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের নির্মাণ কাজ। সে বছর মে মাসে ৪ কোটি ৯০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যায়ে এই প্রকল্পের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মনজুরুল আলম এন্ড কোং।

১৫ মে শুরু হয় অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের নির্মাণকাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তি ছিল একই বছর ৩০ ডিসেম্বর মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার। সাড়ে ৭ মাস চুক্তির এই কাজ ৪৬ মাসেও শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। যার ফলে গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত ৫৩৭ তম সিন্ডিকেট সভায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যাদেশ বাতিল করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল বলেন, প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি। তাই তাদের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। এটি পুনরায় টেন্ডার হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে হলটির নির্মাণ কাজ ৬২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে কার্যাদেশ বাতিলেরও বহু আগে থেকে বন্ধ হয়ে আছে হলটির নির্মাণ কাজ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন হলটির চারপাশে আগাছায় ভর্তি, দেয়ালে জমেছে শ্যাওলা, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। হুট করে কেউ দেখে ভেবে বসতে পারেন এটি হয়তো পরিত্যক্ত কোনো স্থাপনা।

এর মধ্যে গত ২১ জুলাই দিবাগত রাতে নির্মাণাধীন এই হলের ভেতর থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়ে যায়। মালামাল চুরি হওয়ার পর সেখানে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ দেয়া হয়। এর আগ পর্যন্ত হলটিতে কোনো নিরাপত্তাকর্মী ছিল না।

এ বিষয়ে হলটির প্রভোস্ট ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সুমন বড়ুয়া বলেন, যখন চুরি হয়েছিল তখন আমি প্রভোস্ট ছিলাম না। আগে চুরি ঘটনা ঘটলেও হলে যেসব জিনিসপত্র অবশিষ্ট আছে তা রক্ষা করা প্রভোস্ট হিসেবে আমার দায়িত্ব। তাই আমি রেজিস্ট্রারকে অনুরোধ করে হলে নিরাপত্তা রক্ষীর ব্যবস্থা করেছি।

এদিকে হলটির পুনরায় নতুন করে টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলতাফ-উল-আলম। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের অধিক পরে গিয়েও প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। তাই সিন্ডিকেটে তাদের কার্যাদেশ বাতিল হয়েছে। তবে বর্তমানে নতুন টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলছে। শীঘ্রই নতুন টেন্ডার হবে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে ছাত্রদের জন্য চালু করে দেয়া হবে।

অপরদিকে হলের কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় কোন বিভাগের ছাত্রদের এই হলে সংযুক্তি দেওয়া হয়নি। হলে কোনো ছাত্রছাত্রী সংযুক্ত না হলেও নির্মাণাধীন এই হলে এই পর্যন্ত প্রভোস্ট নিয়োগ পেয়েছেন ৩ জন।

২০২০ সালের ৩০ জুন ১ বছরের জন্য অতিশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের প্রথম প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম।হলের গায়ে জমেছে শ্যাওলা, নির্মাণ কাজ শেষ না হলেও প্রভোস্ট হয়েছেন ৩ জন 1

পরবর্তী বছরের ১ জুলাই হলের প্রভোস্ট হিসেবে যোগদান করেন নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. কুন্তল বড়ুয়া। এরপর গত ২ আগস্ট প্রভোস্টের দায়িত্ব পান ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সুমন বড়ুয়া। প্রত্যেকেই হল প্রভোস্টের সকল সুবিধা ও ভাতা গ্রহণ করছেন বলে হিসাব নিয়ামক দফতর সূত্রে জানা গেছে।

হলের অসমাপ্ত নির্মাণকাজ , হলে কোন শিক্ষার্থীকে আসন বরাদ্দ না দেওয়া এমনকি কোন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংযুক্তিও না দেওয়া সত্ত্বেও কেন প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান বলেন, হল চালু না হলেও প্রভোস্ট নিয়োগের নিয়ম আছে। এরকম আগে অন্যান্য হলের ক্ষেত্রেও হয়েছে। প্রভোস্ট থাকলে হলের কাজসমূহ সুন্দর করে গুছানো যায়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।