‘আপনি চাকুরির পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করে বাড়তি আয় করতে পারবেন’—হোয়াটসঅ্যাপে এমন মেসেজ পাঠিয়ে শুরু হয় যোগাযোগ। সরল বিশ্বাসে যারা এমন অফার গ্রহণ করেন তাদের যুক্ত করা হয় টেলিগ্রামে। আর সেখানে পরবর্তী আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে দেওয়া হয় কাজ। যার বিনিময়ে জমা হতে থাকে লক্ষ লক্ষ টাকা। আর সেই টাকা উত্তোলনের কথা বলে গ্রাহক থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে কোটি টাকা লুটে পাচার করা হতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইতে।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তারের পর এসব বিষয় চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় চক্রের মূল হোতা শনাক্ত করে তাদের হেফাজত হতে আত্মসাৎকৃত ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮১৪ টাকা এবং ঘটনায় ব্যবহৃত ৪টি মোবাইল জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—আল ফয়সাল, আরেফা বেগম এবং নিজাম উদ্দিন। এরমধ্যে আল ফয়সাল চক্রের মূল হোতা দুবাইতে বসবাসরত সম্রাটের (২৬) বড় ভাই এবং আরেফা বেগম তার মা। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। চক্রের আরেক মূল হোতা দুবাইতে বসবাসকারী সাতকানিয়ার মান্নান।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, দুবাই থেকে নিজেদের তৈরি ওয়েব সাইট https://forttunemix.com/#/ Ges http://fortuunemix.com এর মাধ্যমে অনলাইন প্রতারণা কার্যক্রম চালিয়ে অর্থ জমানো হতো মা-ভাই প্রতিবেশিদের কাছে। তার পর তা পাচার করা হতো বিদেশে।
যেভাবে হাতিয় নেওয়া হয় কোটি কোটি টাকা
প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাঠিয়ে আউটসোর্সিং এর নামে অর্থ আয়ের লোভ দেখানো হয়। তারপর টেলিগ্রাম গ্রুপে সংযুক্ত করে ওয়েবসাইটে সংযুক্ত হতে বলা হয়। অনলাইন প্রতারকরা ভুক্তভোগীদের বলে যে, ওয়েবসাইটে একটি একাউন্ট খুললে এবং তাদের দেওয়া কাজগুলো করলে পেমেন্ট পাওয়া যাবে। পেমেন্ট উত্তোলনের পূর্ব পর্যন্ত ভুক্তভোগীর একাউন্টে টাকা জমা হতে থাকবে। এভাবে কাজ করতে করতে অল্পতেই ওয়েব সাইটের একাউন্টে ১-২ লক্ষ টাকা জমা হলে অনলাইন প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীদের জানান যে, আপনি অনলাইনে কাজ করতে গিয়ে কিছু ভুল করেছেন যার কারণে আপনার কিছু পয়েন্ট কাটা গেছে আপনার একাউন্টের জামকৃত টাকা তুলতে হলে তাদের প্রি-পেমেন্ট করতে হবে। ভুক্তভোগীদের জমাকৃত টাকা উত্তোলনের লোভ দেখিয়ে কখনও হাজার টাকা কখনও লাখ টাকা পাঠাতে বলা হয়। আর অর্থ পাঠালে ফের কাজে ভুলের কথা বলা হয়
এভাবে ধাপে ধাপে কারো নিকট ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কারো নিকট ১৬ লক্ষ টাকা, কারো নিকট ২২ লক্ষ টাকাসহ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি। আর এই পুরো কার্যক্রম পরিচালিত হতো দুবাই থেকে।
পুলিশ জানায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাংলাদেশিদের একাউন্ট ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্রটি। চক্রের একজন প্রধান হলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সম্রাট আরেকজন সাতকানিয়ার মান্নান। তারা দুবাইতে অবস্থান করছে। সেখানে ছদ্মনাম ব্যাবহার করে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভূয়া আউটসোর্সিংয়ের কথা বলে অনলাইন প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে তার পরিচিত কারোর একাউন্টে পাঠিয়ে সেটা তার ভাই বা মায়ের নিকট পাঠিয়ে দেয়। আবার কোন পরিচিত হুন্ডি ব্যাবসায়ীর মাধ্যমে টাকাগুলো দুবাই নিয়ে যায়।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিবি-বন্দর ও পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, এভাবে দেশের ডলার ক্রান্তিকালে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। তদন্তে এক ব্যক্তির গত ২ মাসে একটি একাউন্টে ১ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা ও আরেকটি একাউন্টে ২ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকাসহ কারো একাউন্টে ১৮ লক্ষ কারো একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। মামলা তদন্তের পরিসর অনেক বড়। এই প্রতারণার চক্রটি দেশব্যাপী বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। ইংলিশ পড়তে এবং লিখতে জানে এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের উত্তর দেওয়া থেকে শুরু হয় প্রতারণার যাত্রা।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।