টানা বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধির ফলে লংগদু উপজেলার মাইনী নদী, কাচালং নদী ও কাট্টলী বিলে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার ঘর-বাড়ি, সাথে শতশত হেক্টর ফসলি জমি।
মাইনীমুখ ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল জানান, প্রতিদিন বৃষ্টিপাতের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাইনী ইউপির তিনটি ওয়ার্ডে অন্তত দেড় হাজার পরিবারের ঘর-বাড়ি পানিতে ডুবেছে। গো-চারণ ভূমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গৃহপালিত পশু হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছে পানি বন্দি এসব জনসাধারণ। এছাড়ও শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার ইউনিয়নে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানিবন্দি লোকজনকে আপাতত আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বগাচতর ও গুলশাখালীর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বশর ও শফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার গুলশাখালী ও বগাচতর ইউনিয়নে পাহাড়ের উজানে নেমে আসা পানি ও কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধ পাওয়ায় শতশত ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই সাথে বিভিন্ন ক্ষেত-ফসল পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পশু খাদ্য না থাকায় পালিত পশুগুলোকে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন কেউ কেউ। এসব পানিবন্দি এলাকায় খাবার পানীয় সংকটসহ দেখা দিচ্ছে নানান পানিবাহিত রোগ বালাই। পানি বন্দি ও আশ্রিতদের জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার প্রয়োজন।
বেশ কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে কাপ্তাই লেকে পানির উচ্চতা বেড়েছে। আর এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের গাউসপুর, ফরেস্ট টিলা, জালিয়াপাড়া, ফোরেরমূখ, ভাসান্যদম ইউনিয়নের ভাসান্যদম এলাকা, গুলশাখালী ইউনিয়নের ডিপোরমুখ, সোনারগাঁও এলাকা, লংগদু সদর ইউনিয়নের তিনটিলা, ঝর্ণাটিলা, কালাপাকুজ্জ্যা ইউপির রসুলপুর, রাজাপুর, রহমতপুর, হোসেনপুর, বাজার টিলা ও শিবির বাজারের একাংশ, আটারকছড়া ইউপির উত্তর ইয়ারংছড়ি এবং মাইনীমুখ ইউপির গাঁথাছড়া বড়কলোনি, এফআইডিসি, মাদ্রাসাটিলা সহ বিভিন্ন এলাকার হাজারো পরিবার।
সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে লেকের পানির উচ্চতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এপর্যন্ত হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৮.২২ ফুট এমএসএল হওয়ায় বিপৎসীমায় রয়েছে লংগদুর নিম্নাঞ্চলবাসী।
এদিকে লংগদু উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি লোকজনদের শুকনো খাবার বিতরণ শুরু করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, অতি বর্ষণে কাপ্তাই হ্রদের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার নিম্নাঞ্চল এলাকা ডুবে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা তদন্ত করে পানিবন্দি এলাকায় ও আশ্রয়ন কেন্দ্রে শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করেছি।
তিনি আরও জানান, উপজেলায় ১৭টি আশ্রয়ণ প্রকল্প খোলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৫ মেট্রিকটন চাল ও ২লক্ষ টাকার শুকনো খাবার বরাদ্দ করেছি এবং পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচতে ৩২ হাজার টেবলেট ও খাবার স্যালাইন বরাদ্দ করেছি।
ত্রাণ বিতরণের সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আকিব ওসমান, মাইনীমুখ ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমল, ইউপি সদস্য রুবেল হোসেন, ওসমান গণি, রাবেয়া আক্তার, মাইনীমুখ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রশীদ আহম্মদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, চলমান অতিবৃষ্টির ফলে ব্যাপক হারে হ্রদে পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার সমতলে অবস্থিত বিভিন্ন প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে অধিকাংশ সড়কপথ তলিয়ে গেছে। ফলে ভোগান্তিতে রয়েছে জনসাধারণ।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।