২০২৬ সাল হতে সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠানোর বিষয়ে আশাবাদী ধর্ম উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, আমরা হজের খরচ কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, ১ লাখ টাকা কমাতেও পেরেছি। আরও খরচ কমাতে বিকল্প পথ হিসেবে সমুদ্রপথে হাজী পাঠাতে সৌদি আরবের সঙ্গে কথা বলেছি৷ আমি আশাবাদী ২০২৬ সাল হতে আমরা সমুদ্র পথে হজযাত্রী পাঠাতো পারবো। এ ছাড়াও আমাদের ধর্মীয় সেক্টরকে আরও সমৃদ্ধ করতে, উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করতে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে চুক্তি করতে চেষ্টা চলমান রয়েছে।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) আল-আমিন সংস্থার উদ্যোগে চট্টগ্রামের হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় ময়দানে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ৩ দিনব্যাপী তাফসীরুল কুরআন মাহফিল সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, বহু বছর ধরে বাংলাদেশের হাফেজগণ বিভিন্ন দেশ থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কার নিয়ে আসছেন। দেশের সুনাম ছড়িয়ে দিচ্ছেন। মাদরাসাগুলো হচ্ছে আলোর মিনার আর আলেমগণ আকাশের তারকা। আলেম সমাজ আছে বলেই এখনও মসজিদের মিনার থেকে আজান শোনা যায়। মানুষ ইসলামকে জানতে পারছে। এ কাজকে আরও বেগবান করতে কওমী মাদরাসা সনদকে কার্যকরি করতে প্রাইমারি স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন সেক্টরে আলেমদের নিয়োগ দিতে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।

মুহাম্মাদ আহসান উল্লাহ, মাওলানা মাহমুদুল হোসাইন ও মাওলানা রিজওয়ান আরমানের সঞ্চালনা ও মুফতী জসীমউদ্দিন, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী, মাওলানা মীর কাসেম ও মাওলানা সোলায়মানের ধারাবাহিক সভাপতিত্বে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কারী সাঈদুল ইসলাম আসাদ।

আর্ত মানবতার সেবায় বিশেষ অবদান রাখায় দেশের আলোচিত সেবামূলক সংগঠন আল-মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনকে আল-আমিন সংস্থার পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

মাহফিলে আরও তাফসীর পেশ করেন, আল্লামা মুফতী রশীদুর রহমান ফারুক, আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী, মুফতী মুস্তাকুন্নবী কাসেমী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মুফতী রাফি বিন মুনির, মুফতী সিরাজুল্লাহ মাদানী, মুফতী সোলাইমান, মাওলানা ইসমাইল খান প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ ভারতের সময়কালে মুসলমানরা মূলত জাহাজে করে হজ করতে যেতেন। বাংলাদেশ (তখনকার পূর্ববাংলা) থেকে প্রথম হজযাত্রা ১৯২৭ সালে জাহাজে শুরু হয়। সত্তর দশকের আগ পর্যন্ত বড় বড় জাহাজে হাজার হাজার হজযাত্রী যাত্রা করতেন ও তা ছিল বেশ সময়সাপেক্ষ এবং চ্যালেঞ্জিং। সাধারণত ২ কিংবা ৩ সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় লাগত বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর, আরব সাগর এবং লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে সৌদি আরবের জেদ্দা বন্দরে পৌঁছাতে। ওই ভ্রমণের সময় আবহাওয়ার প্রভাব, সমুদ্রের ঝড় ও জাহাজের গতি ইত্যাদি বিষয়গুলো যাত্রীদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসত। পূর্ব পাকিস্তানের সময়ে ‘সেলিম’, ‘সিন্ধু’, ‘মির্জা’, ‘বালুচিস্তান’ ইত্যাদি নামে জাহাজগুলো হজযাত্রী পরিবহন করত।

সত্তর দশকের পরে বাংলাদেশ থেকে জাহাজে করে হজযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে বাংলাদেশ বিমানের মাধ্যমে বিমানপথে হজযাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে হজযাত্রা অনেক দ্রুত এবং নিরাপদ, বিমানপথে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সৌদি আরবে পৌঁছানো যায়। জাহাজে হজযাত্রার সময় যেখানে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগত, এখন সেটি সম্পন্ন হয় মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাহাজে হজ করতে গেলে বিমানের চেয়ে ভাড়া ৪০ শতাংশ কম হবে। খরচ কম হলে যাদের টাকা কম তারা আগ্রহী হবেন। অনেক আগে থেকেই সমুদ্রপথে হজযাত্রার তাগিদ রয়েছে। এ বিষয়ে অসংখ্যবার সৌদি আরবের সঙ্গে কথা হলেও এবারই তারা নীতিগতভাবে সম্মতি দিয়েছে। আমরা এই বছরই জাহাজে পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। বিমানে যেমন খরচ বেশি সময় কম লাগে, তেমনই সমুদ্রপথেও রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ ও দুর্ঘটনার শঙ্কা। যদিও এখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জাহাজেও সময় অনেক কম লাগে এবং যাত্রাও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। তাই বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।