চিরচেনা পরিবেশ, রক্তের বাঁধন সব একপাশে রেখে অনেকেই পাড়ি জমান বিদেশ। উদ্দেশ্য—স্বজনদের মুখে হাঁসি ফোটানো, নিজের ভাগ্য পরিবর্তন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাগ্য পরিবর্তন হয়, কারো সৌভাগ্যের পরশ মিলে আবার কেউ কেউ নানান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে সর্বশান্ত হন।
প্রবাসীদের দেশে ফেরার অপেক্ষায় থাকেন মা-বাবা, আত্মীয় স্বজন। মাঝে মধ্যে কিছু প্রবাসী দেশে ফিরেন সর্বশান্ত হয়ে। আবার কেউ কেউ অস্বাভাবিক অবস্থায় দেশে ফিরেন। যেমনি গত জানুয়ারীতে দেশে ফিরেছিলেন বৃদ্ধ আবুল কাশেম। অনেকটা তার মতোই মিজানের অবস্থা।
আজ থেকে ২২ বছর আগে বিদেশ যাওয়া মিজানুর রহমান দেশে ফিরেছেন। পাসপোর্টে তার পিতার নাম লিখা আছে আব্দুল জব্বার, বোন একজনের নাম ফাতেমা বেগম। আর যোগোযোগের জন্য নাম দেওয়া আছে আরেক বোন আনোয়ারার নাম।
হয়তো তার অপেক্ষায় আছে স্বজনরা, কিন্তু নেই কোনো যোগাযোগ। পাসপোর্টটি ইস্যু হয়েছে গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর। পাসপোর্টের ঠিকানা দেওয়া আছে ১২০ সদরঘাট সড়ক, কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম। পাসপোর্টে যোগাযোগের সে মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে সেটিও ভুল, ব্যবহার করছেন ঢাকার আরেক ব্যক্তি।
জানা গেছে, শুক্রবার (১৮ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় বাংলাদেশ বিমানের ইএ-১৩৬ বিমান যোগে ঢাকায় পৌঁছান মিজানুর। পরে তিনি বিমানবন্দরের ভেতরে ঘোরাফেরা করতে দেখে সন্দেহ হলে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) তাকে উদ্ধার করে তুলে দেয় ব্র্যাক মাইগ্রেশন সেন্টারের হাতে। মিজানুরের ঠিকানা এখন ব্র্যাকের লার্নিং সেন্টার।
ব্র্যাক মাইক্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপক আল আমিন নয়ন চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, আমরা নানাভাবে তার কাছ থেকে স্বজনদের সম্পর্কে, কেন এতদিন পর দেশে আসলেন সেসব বিষয় জানতে চেষ্টা করেছি। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় কথাবার্তাও গুছিয়ে বলতে পারছেন না। কখনো স্বাভাবিক, কখনো আবার অস্বাভাবিক কথা বলছেন তিনি। তবে খাবার খাচ্ছেন। পায়ে ইনফেকশন থাকায় শনিবার কুর্মিটোলা হাসপাতালে তার প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়েছে।
আল আমিন নয়ন আরও বলেন, ব্র্যাকের চট্টগ্রাম অফিসের লোকজন কোতোয়ালী-সদরঘাট এলাকায় লিফলেট বিতরণ করছে। ১২০ নম্বর হোল্ডিং খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। মিজানুরের বিষয়ে কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে ০১৭১২১৯৭৮৫৪ নম্বরে জানানোর জন্যও অনুরোধ করেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তী বলেন, পাসপোর্টে বর্ণিত সদরঘাট সড়কে ১১৮, ১১৯, ১২১ এবং ১২২ নম্বর হোল্ডি আমরা পেয়েছি। ১২০ নম্বর হোল্ডিং খুঁজে পাইনি। ১২০ নম্বর হোল্ডিং খুঁজতে ভূমি অফিসের সহযোগিতা চেয়েছি। ১২০ নম্বর হোল্ডিং পেলে জানা যাবে তিনি কী ওই বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা নাকি ভাড়াটিয়া ছিলেন। ভাড়াটিয়া হলে ২২ বছর আগের ভাড়াটিয়ার তথ্য পাওয়াও মুশকিল। তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে তার স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।