২ মাসে বদলে যাবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা—জেলা প্রশাসক

আগামী দুই মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা বদলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এই ঘোষণা দেন। এসময় চিড়িয়াখানাকে ঘিরে জেলাপ্রশাসনের গৃহীত একগুচ্ছ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

মমিনুর রহমান বলেন, ১৯৮৯ সালে ছোট্ট পরিসরে মাত্র ৫ একর জায়াগা নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই চিড়িয়াখানার পরিধি এখন অনেক বিস্তৃত। বর্তমানে জায়গা বৃদ্ধি করে ১০ দশমিক ২ একর করা হয়েছে। চিড়িয়াখানায় লোকবল বেড়েছে। বন্য প্রাণীর সংখ্যা বেড়েছে। অবকাঠোমগত আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে।

চিড়িয়াখানার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাঘ ও জেব্রা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে ভল্লুক, সিংহ, হরিণ (চিত্রা, সাম্বার, মায়া), উল্লুক, বানর, মেছোবিড়াল, চিতাবিড়াল, অজগর, বাঘদাশ, উঠপাখি, ইমু পাখি, গয়াল, কুমির, ময়ূর, ঘোড়া ,বক, টিয়া সহ ৬৬ প্রজাতির ৬২০টি পশুপাখি আছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার কারণে ২০১৯ সালে দলগতভাবে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক অর্জন করে।

জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের একটি বিশাল পরিকল্পনা রয়েছে। আপনারা ইতোমধ্যে অবগত আছেন সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুরে খাস জমিতে সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সেখানে আমরা একটি ‘নাইট জু’ তথা এভিয়ারি পার্ক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীকাল সেখানে সম্ভাব্য জায়গা পরিদর্শন করবো।

প্রজাপতি পার্ক তৈরি, পাহাড়ে অভয়ারণ্য সৃষ্টি করা, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ট্রেনিং কোর্স চালু করা, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের ফ্রি টিকেটের ব্যবস্থা করে তাদের সুযোগ করে দেওয়া, অনলাইন টিকেট সিস্টেম চালু করার কথা রয়েছে।

২ মাসে বদলে যাবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা—জেলা প্রশাসক 1

২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জিরাফ, ক্যাঙ্যারুসহ বেশ কিছু প্রাণী আনার ঘোষণা দেন। সেই সাথে চিড়িয়াখানায় শিশুপার্কের আদলে দোলনা, স্লাইডার অভিবাবকের বিশ্রামাগার করার কথা বলেন। কাগজে কলমে সেটি বাস্তবায়িত হলেও জিরাফ, ক্যাঙারুসহ প্রাণী আনার বিষয়ে কোন সুরাহা হয়নি। তার কিছুদিন পর তিনি পদোন্নতি পেয়ে বদলী হয়ে চলে যান। এরপর ইলিয়াস হোসেন জেলা প্রশাসক হয়ে চট্টগ্রামে আসেন। কিন্তু পূর্ব ঘোষিত জিরাফ, ক্যাঙারুসহ অন্য প্রাণীগুলো আর আসেনি।

এই বিষয়ে দৃষ্টিআকর্ষণ করা হলে বর্তমান জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, কোভিডসহ বিভিন্ন কারণে আমরা ওই প্রাণীগুলো সংগ্রহ করতে পারিনি। এই বিষয়ে আমরা প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ে অবগত করেছি। অচিরেই সিংহ, জিরাফ, জলহস্তী, উট, ওয়াইল্ড বিষ্ট চিড়িয়াখানায় সংযুক্ত হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে চিড়িয়াখানার বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করে তা সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অবমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন নজর দেওয়ার আগে টাকা মেরে দেওয়ার অভিযোগ ছিল। বাঘের খাদ্য তালিকায় মাংস থাকলেও বাঘকে দেওয়া হতো আলু, গাজর, মুলা জাতীয় খাবার। খাদ্য সংকটে চিড়িয়াখানার একাধিক প্রাণি মারা যাওয়ার অভিযোগ ছিল।

২ মাসে বদলে যাবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা—জেলা প্রশাসক 2

ভেজাল বিরোধী অভিযানে আলোচিত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিনকে চিড়িয়াখানার দায়িত্ব দিয়েছিলেন ডিসি মেজবাহ উদ্দিন। এরপরই মূলত ঘুরে দাঁড়ায় চিড়িয়াখানা। তলাবিহীন ঝুড়ির চিড়িয়াখানা বর্তমানে কোটি টাকার ফান্ডের প্রতিষ্ঠান। বিদেশ থেকে প্রাণি কিনে চিড়িয়াখানা সমৃদ্ধ করা হয়েছে। সামনে আরও প্রাণি আনার বিষয়টি জানান বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

অযত্ন-অবহেলায় থাকা সেই চিড়িয়াখানা এখন নগরবাসীর বিনোদনের অন্যতম স্থান। শিক্ষার্থী, শিশুদের পাশাপাশি সব বয়সের, সব পেশার মানুষের দম ফেলার স্থান চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। জেলা প্রশাসনের নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সেটি আরও জনপ্রিয়তা পাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

আরও পড়ুন:
চিড়িয়াখানায় খেলছে পদ্মা-মেঘনা-সাঙ্গু-হালদা
জো বাইডেনের বাপ—মায়ের কোলে আরও ৪ বাচ্চা, বাঘের সংখ্যা এখন ১৬

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।