ধর্ম–বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে গত তিন বছর ধরে দিন–রাত করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া, বেওয়ারিশসহ প্রায় ৬৬১ জন ব্যক্তির লাশ দাফন ও সৎকার করেছেন কর্ণফুলীর গাউসিয়া কমিটি। এর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ৭ জন, বেওয়ারিশ লাশ ছিলো ১২ জন। সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের লাশ। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলার বাইরেও দাফন-কাফনের পাশাপাশি দুস্থ অসহায় ১০৫ জন রোগীদের ফ্রি এম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সেবাও দেন তারা।
গত বুধবার (১৯ জুলাই) রাতে উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পরিচালিত শহর-জান ফোরকানিয়া মাদ্রাসা অনুষ্ঠিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছেন সংগঠনের কর্ণফুলী স্বেচ্ছাসেবক টিম ও মানবিক টিমের সমন্বয়ক মো. ইমতিয়াজ উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কর্ণফুলী গাউসিয়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইলিয়াস মুন্সি, প্রধান বক্তা ছিলেন কর্ণফুলী থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলম।
সদস্য সচিব মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন গাউসিয়া কমিটি শিকলবাহা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইউনুস, বিশেষ অতিথি ছিলেন বড়উঠান ইউনিয়ন গাউসিয়া কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ জামাল সওদাগর, মাওলানা গাজী মুহাম্মদ ইসহাক, এএসএফ সদস্য মোহাম্মদ জামাল, মাওলানা আবুল কাশেম, মোহাম্মদ তৈয়ব হোসেন, মোহাম্মদ ফারুক, মোহাম্মদ মঞ্জুর আলম, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, মুহাম্মদ তৈয়ব হুসেন, মো. নুরুল আবসার, মো. খোরশেদ আলম, মো. লোকমান হোসেন রানা, মো. হাসান মুরাদ, মীর আহমদ, মোহাম্মদ ফজলুল করিম, মোহাম্মদ ইসমাইল।
সংগঠন সূত্র জানা যায়, করোনাসংকটের শুরুতে সংগঠনটির কর্মীরা নিজ নিজ এলাকার উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত লাশ দাফনকাজের প্রশিক্ষণ নেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে সুরক্ষা পোশাক পরে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়। এ কাজ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত সংগঠনটির কোনো স্বেচ্ছাসেবী করোনায় আক্রান্ত হননি।
লাশ দাফন ছাড়াও বিভিন্ন জেলা–উপজেলায় অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ করেছে তারা। করোনার রমজানে অসহায় পরিবারে ত্রাণ বিতরণও করে। ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রামের আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.) এই গাউসিয়া কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের তত্ত্বাবধানে দেশে ২০০–এর বেশি মাদ্রাসা পরিচালিত হয়।
কর্ণফুলী স্বেচ্ছাসেবক টিম ও মানবিক টিমের সমন্বয়ক মো. ইমতিয়াজ উদ্দিন প্রতিবেদনে জানান, ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু থেকে সংগঠনটি তিন বছরে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বৌদ্ধ, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষসহ ৬৬১ জনের লাশ দাফন ও সৎকার করেছে।
তিনি আরও জানান, করোনার শুরুতে লাশের জানাজা পড়ানোর জন্য ইমামও পাওয়া যাচ্ছিল না। এ কারণে আমাদের মধ্যে অনেকেই বাংলা শিক্ষিত হয়েও ইমামতি করতে হয়েছে।
গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ চেয়ারম্যান পেয়ার মুহাম্মদ কমিশনার বলেন, যে মুহুর্তে নিজের সন্তানও পিতার লাশ ফেলে যাচ্ছেন সে মুহুর্তে করোনা আক্রান্তসহ স্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ গোসল ও শেষকৃত্যের সব কাজ করেছেন গাউসিয়া কমিটির স্বেচ্ছাসেবীরা। আমাদের এই কার্যক্রম মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে আজীবন এমটায় আশা করি।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।