২০১৬ সালে কেবল ৪টি গরু নিয়ে একটি স্বপ্নের শুরু করেন তরুণ উদ্যোক্তা ওয়াসিফ আহমেদ। লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় চট্টগ্রামের বনেদি ব্যবসায়ী পরিবারের সর্ব কনিষ্ঠ সন্তানের গড়ে তোলা এশিয়ান এগ্রো নামের এই প্রতিষ্ঠান আজ অনেক পরিণত, অনেক সমৃদ্ধ। চলতি ঈদের মৌসুমে প্রতিষ্ঠানটি এখনও পর্য়ন্ত ৪ কোটি টাকার বেশি গরু বিক্রি করেছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়েছে ১০ লাখ টাকা দামে শাহীওয়াল জাতের গরু টার্মিনেটর ও হুবলো।
জানা গেছে, চলতি কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩৫০টি গরু প্রস্তুত করেছিলো। বাহারি রঙের এসব গরু ক্রেতাদের এতটাই আকৃষ্ট করেছে যে ঈদের এক সপ্তাহ আগে প্রায় ৯৭ শতাংশ গরু বিক্রি শেষ হয়ে যায়। মূলত ক্রয়ের পর ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ফার্মে গরু রাখার সুবিধা ক্রেতাদের বেশি আকৃষ্ট করেছে।
এশিয়ান এগ্রোর এবারের বড় আকর্ষণ ছিলো শাহীওয়াল জাতের গরু টার্মিনেটর ও হুবলো। চাল-চলনেও বেশ ঠাট-বাট ওই টার্মিনেটর। কিছুটা অশান্ত প্রকৃতির। তাই সারাক্ষণ নাকের রিং ধরে রাখে রাখালরা। ৪ বছর বয়সেই সাড়ে ৯শ কেজি ওজন এই গরুর। এই গরু বিক্রি হয়েছে ১০ লাখে। একই জাতের আরেক গরুর নাম দেয়া হয়েছে হুবলো। বছর খানেক আগে চট্টগ্রামের ওই খামারে আগমন। তবে হুবলো বেশ শান্ত। রাখালদের খুব একটা চিন্তা করতে হয় না। একই ওজনের হুবলোর দামও ১০ লাখ।
পথচলার ৭ বছরের মাথায় এশিয়ান এগ্রো আজ সবার কাছে খুবই পরিচিত। এর পেছনে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নতুন উদ্যেগ এবং ক্রেতাদের প্রতি আন্তরিকতা। আর এসব কিছুর পেছনে রয়েছেন এশিয়ান এগ্রোর স্বত্বাধিকারী ওয়াসিফ আহমেদ। শৈশবে যিনি স্বপ্ন দেখতেন ক্রিকেটার হওয়ার। ইচ্ছে ছিল ক্রীড়াঙ্গনে দেশকে নেতৃত্ব দেবেন। এখন ব্যবসাখাতেই দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার স্বপ্ন এই তরুণের।
১৯ বছর বয়সী এই তরুণ চট্টগ্রাম শহরের হাটহাজারী উপজেলার নন্দীর হাটে নিজের প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন এশিয়ান এগ্রো নামের এই গরুর খামার। নিজের জমানো টাকা ছিল সেই টাকা দিয়ে শখের বসে ৪টি গরু কেনেন। এরপর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি, পরের বছর সেই দুটি গরুর থেকে ১০টি গরুতে রূপান্তর করেন। ২০১৮ সালে খামরে ৮০টা গরু হয়। বর্তমানে তা ছাড়িয়ে গেছে কয়েকশ।
নিজ প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠানকে আরও অনেক দূর নিয়ে যেতে চান ওয়াসিফ আহমেদ। তিনি বলেন, একদম ছোট থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি শুরু হয়েছে। এখন আমাদের ব্যবসায় অনেকটা প্রসার হয়েছে আমরা চাই সামনে আরও এগিয়ে নিতে।
তিনি বলেন, আমরা খুবই যত্ন সহকারে গরু লালন পালন করি। এখানকার পরিবেশও অনেক সুন্দর, সু-সজ্জিত। ক্রেতারা নিজেদের পরিবার পরিজন নিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানে এসে গরু পছন্দ করতে পারেন। সাধারণত পশুর হাটে নারীদের যাওয়া ভোগান্তিকর। কিন্তু ফার্মে সবাই আসতে পারেন। তাছাড়া আমরা ঈদের আগের দিন পর্য়ন্ত খামারে গরু রাখার সুবিধা দিচ্ছি। এতে করে ক্রেতারা গরু নিয়ে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগের তুলনায় এখন পশুর খাবারের দাম অনেক বেশি। তাই আমাদের বাড়তি দামে গরু বিক্রি করতে হয়েছে। যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে পশু খাদ্যের দাম কমিয়ে আনেন তাহলে পশুর দামও কমে যাবে।
গরুর খামারের পাশাপশি ওয়াসিফ আহমেদ নিজের প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেছেন আরও কিছু ব্যবসা। ২০১৭ সাল থেকে শুরু করেন পাঞ্জাবীর ব্যবসা। ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে অনলাইনে পিজ্জা ডেলিভারির একটি ব্যবসা চালু করেন। যেটা রাত তিনটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহরে ডেলিভারি দেয় এবং ২০২০ সালেই কনক্রিট ব্লক এর ফ্যাক্টরি চালু করেন তিনি।
ব্যবসাকে আকঁড়ে ধরেই বাকিটা জীবন কাটানোর ইচ্ছে এখন এই তরুণ উদ্যোক্তার। ওয়াসিফ আহমেদ বলেন, ব্যবসাখাতে আমার যে সফলতা এসেছে এটা আমার জন্য একটা শিক্ষামাত্র, এই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আমি আমার ব্যবসাগুলো বড় করবো।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।