৬৪ হাজার ৭৭০ টন কয়লা নিয়ে মাতারবাড়ীতে ভিড়েছে পানামা পতাকাবাহী জাহাজ ‘GCL Paradip’। ২২৯ মিটার লম্বা এ জাহাজ কয়লা নিয়ে মাতারবাড়ি আসা চতুর্থ জাহাজ। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখনো উৎপাদনে যায়নি। সব ঠিক-ঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বের পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে।
বুধবার (১৪ জুন) সকালে জাহাজটি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় আসে। চট্টগ্রাম বন্দরের শক্তিশালী টাগবোট কাণ্ডারী ২ ও ৩’এর সহযোগিতায় জাহাজটি কৃত্রিম চ্যানেল দিয়ে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল ৯টা নাগাদ জাহাজটি জেটিতে ভিড়ে বলে চট্টগ্রাম খবরকে নিশ্চিত করেন মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের ব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন আতাউল হাকিম।
মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর সূত্রে জানা গেছে, কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য প্রথম কয়লা নিয়ে গত ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ২২৯ মিটার দীর্ঘ ও ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট’র (জাহাজের পানির নিচের গভীরতা) পানামার পতাকাবাহী এমভি ‘অউসো মারো’ মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দরের বহির্নোঙরে আসে। পরদিন মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে আনা হয়। জাহাজটি সফলভাবে কয়লা খালাস শেষে গত ৭ মে সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ মাতারবাড়ী জেটি ছেড়ে যায়। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিজস্ব জেটিতে মাদার ভেসেল ভিড়াতে ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার লম্বা (প্রস্থ ৩০০ মিটার) চ্যানেল খনন করা হয়েছে। নাব্যতা নিশ্চিত করার জন্য সেডিমেন্টেশন মিটিগেশন ডাইক করা হয়েছে। এতে করে বছর বছর ড্রেজিংয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবেন চ্যানেলটি।
গভীর সমুদ্রবন্দরসহ নানা দিক থেকে অন্যান্য কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এগিয়ে থাকছে কেন্দ্রটি। পুরোমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দৈনিক ১৩ হাজার ১০৪ টন কয়লার প্রয়োজন হবে। এ জন্য কয়লা খালাসের জেটি ও সাইলো নির্মাণ করা হয়েছে।
বিশাল আকৃতির সাইলোগুলোতে ৬০ দিনের কয়লা মজুদ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কয়লার জেটিতে সরাসরি ৮০ হাজার টন ক্ষমতা সম্পন্ন মাদার ভেসেল ভিড়তে পারবে। আর মাদার ভেসেল থেকে কয়লা খালাস করতে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই দিন।
কয়লার সহজ পরিবহনের বিষয়টি মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বিশেষভাবে এগিয়ে রাখবে। পায়রা কিংবা রামপালে মাদার ভেসেল গভীর সমুদ্রে রেখে লাইটারেজে করে কয়লা খালাস করতে হয়। বিষয়টি একদিকে যেমন সময় সাপেক্ষ, তেমনি ব্যয়বহুল। লাইটারেজ ভাড়া ছাড়াও মাদার ভেসেলের অপেক্ষমান চার্জ হাজার হাজার ডলার গুণতে হয়। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এসব ঝামেলার বালাই থাকছে না।
গত জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শক করেন। পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে জানান, আগামী ডিসেম্বর মাসে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে। তখন ৬০০ মেগাওয়াট এবং এর ৬ মাস পর আর দ্বিতীয় ইউনিট (৬০০ মেগাওয়াট) বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসবে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।