৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে শনিবার, সাগরে নামতে প্রস্তুত জেলেরা

শনিবার (২৩ জুলাই) মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা। শান্ত সাগর মুখরিত হবে জেলেদের কলকাকলিতে। শুরু হবে হাঁকডাক। বাজারের মাছের যে সংকট সেটিও দূর হচ্ছে সপ্তারে শুরুতেই।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রামের ফিশারিঘাট গিয়ে দেখা যায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে জেলেরা এসে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাগরে নামার। কেউ জাল বুনছেন, কেউ নৌকা ধোয়া-মোছা করছেন। কেউ কেউ রান্নার উপকরণ লাকড়ি যোগাড় করছেন। আবার কেউ কেউ শিকার হওয়া মাছ সংরক্ষণ করতে কর্কশিটের বক্সও প্রস্তুত করছেন।

নোয়াখালীতে থেকে আসা জেলে মোস্তফা মিয়া বলেন, গত ১৯ মে থেকে ৬৫ দিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে গ্রামে চলে গিয়েছিলাম। দুই দিন আগে আসছি। এসে জাল, নৌকা ঠিক করছি। ‘আল্লাহ বাঁচায়ে রাখলে শনিবার রাতেই নামবো দরিয়ায়। হপ্তা-দশ দিন দরিয়ায় থাকবো।’

নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে যাতে সাগরে মাছ শিকার করা না হয় তা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন দফতর সক্রিয় থাকে। তবে এবার গভীর সমুদ্রে দেশের কোনো নৌকা কিংবা ট্রলার মাছ শিকার না করলেও উপকূলে জেলেদের একটা অংশ নিয়মিত মাছ শিকার করেছে। অথচ সরকার চট্টগ্রামের ২৭ হাজার তিনটি জেলে পরিবারের প্রতিটি পরিবারকে ৮৬ কেজি করে ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দিয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকতা ফারহানা লাভলী বলেন, নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়া চট্টগ্রাম জেলার ২৭ হাজার তিনজন জেলে পরিবারের পাশে থাকছে সরকার। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি জেলে পরিবার ৮৬ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। প্রথম কিস্তিতে ৫৬ কেজি এবং পরের কিস্তিতে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। এ হিসাবে তিন লাখ ২২ হাজার ২৫৮ কেজি (বা দুই হাজার ৩২২ দশমিক ২৫৮ টন) চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে শনিবার, সাগরে নামতে প্রস্তুত জেলেরা 1

তবে বছরে এই ৬৫ দিনের বাইরে মা ইলিশ ধরায় ২২ দিন, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিলের দুই মাসের অভয়ারণ্যের নিষেধাজ্ঞাসহ মোট ১৪৭ দিন নিষেধাজ্ঞা পালন করতে হয় সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার জেলেদের।

সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজিম উদ্দিন চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, দেশের মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা ও মাছের বংশবিস্তারে ২০১৫ সাল থেকে বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছর ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ। শুরুতে শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও ২০১৯ সালে সব ধরনের নৌযানকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। এতে সমুদ্রে মৎস্য প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে।

সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল সরকার বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আগামী শনিবার রাতে। অনুমোদিত ট্রলারের পাশাপাশি আমাদের নৌকাগুলো প্রস্তুত রয়েছে। কেউ শনিবার মধ্যরাতে, কেউ রোববার সকালে সাগরে মাছ শিকারে নামবে।

বঙ্গোপসাগরের এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার জুড়ে প্রায় ৬৮ হাজার ইঞ্জিন চালিত নৌকা আর ২৫১টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার মাছ শিকার করে। সরকারের নিষেধাজ্ঞার ফলে সমুদ্রে মৎস্য প্রজনন বেড়েছে বলে জানা সংশ্লিষ্টরা।

সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় মাছের বাজারে আগুন। মৌসুমে যে লইট্যা মাছের কেজি বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা সেই লইট্যা এবার বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা কেজিতে। রোববার থেকে সামুদ্রিক মাছ বাজারে এলে মাছের দাম কমবে বলে সকলের প্রত্যাশা।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।