অনুমোদিত ভবন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ভেঙ্গে দেয়ার অভিযোগ

মিরসরাইয়ে শিশুদের বিনোদনের লক্ষ্যে নির্মানাধীন স্থাপনা অন্যায়ভাবে ভেঙ্গে দেয়ার অভিযোগ করেছেন একজন উদ্যোক্তা। সুকান্ত কুমার রায় নামের ওই ব্যক্তি উপজেলা পরিষদ থেকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন করে স্থাপনা নির্মাণ শুরুর পর শেষ পর্যায়ে এসে প্রশাসন থেকে কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই ওই স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়া হয়।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৬ জুন) বেলা ১২ টায় চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ঝর্ণা সড়ক এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মিরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ড্রেজার দিয়ে গুড়িয়ে দেন।

এরপর বুধবার (৭ জুন) সকাল ১১টার দিকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি সাংবাদিকদের নজরে আনেন ভূক্তভোগী হোমিও চিকিৎসক সুকান্ত কুমার রায়। এসময় তিনি মিরসরাই উপজেলা প্রকৌশলী রণি শাহ্, উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মো. তাওহিদুল ইসলাম ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি অনুমোদিত নকশা, এছাড়া মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত ভবন তৈরির চূড়ান্ত অনুমোদনের কাগজপত্র সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন।

সুকান্ত কুমার রায় অভিযোগ করেন, ‘পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ভূমিতে ৩ তলা বিশিষ্ট একটি বাণিজ্যিক ভবন উপজেলা পরিষদ থেকে সকল নিয়ম মেনে অনুমোদন নেয়ার পরও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে প্রশাসন অনৈতিকভাবে তা ভেঙ্গে দিয়েছে।’

এসময় তিনি জানান, আমার মালিকানাধীন অনাবাদি পতিত ৩০ শতক জমিতে প্রায় ৭০ লাখ টাকা খরচ করে শিশুদের জন্য প্লে জোন ও একটি খাবারের ক্যাফে করার উদ্যোগ নিই। সেখানে ১০ দশমিক ৩৩ শতক জমিতে ৩ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের জন্য গত ২৯ মার্চ উপজেলা পরিষদে আবেদন করি। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোট ৪১৮ দশমিক ২৩ বর্গমিটার ভবন নির্মাণের প্ল্যান অনুমোদন দেন।

তিনি আরও জানান, ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করার সময় উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমানকে জমির সকল দলিল ও খতিয়ানের কপি এবং ভবন নির্মাণের নকশা আমি সরবরাহ করি। কিন্তু তিনি আমার কোন কাগজপত্র পর্যালোচনা না করে গত ৬ জুন দুপুরে আমার নির্মানাধীন ভবন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ভেঙ্গে ফেলেছেন। এতে করে আমার ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটি আমি এবং আমার স্ত্রীর তিল তিল করে সঞ্চিত টাকা।

এসময় তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘ভবন ভাঙ্গার পূর্বে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আমাকে কোন ধরণের সতর্কতা কিংবা নোটিশ প্রদান করেনি। আমি এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের শরনাপন্ন হবো।’

এদিকে ভূক্তভোগী সুকান্ত কুমার রায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বললে মিরসরাই উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘সুকান্ত কুমার রায় কৃষি জমি ভরাট করে ভবন নির্মাণ করেছেন। তাকে এর আগেও একাধিকাবার ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছিলো।’
ভবন ভাঙ্গার পূর্বে কোন শতর্কীকরণ নোটিশ প্রদান করা হয়েছিলো কি না জানতে চাইলে এসিল্যান্ড বলেন, ‘তাকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছিলো।’
বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে উপজেলা পরিষদ ও প্রকৌশল বিভাগের দেয়া অনুমোদন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান দাবি করেন, ‘ভবন নির্মাণের অনুমোদনে উপজেলা চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত চিঠিটি ভূয়া। সম্পূর্ণ লিগ্যাল ওয়েতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ভবনটি ভাঙ্গা হয়েছে।’

তবে সুকান্ত কুমার রায়ের নামে ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ জমিতে তিন তলা বিশিষ্ট ভবন অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মিরসরাই উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার মতে সব ধরণের নিময় মেনে সুকান্ত কুমার রায়কে তিন তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’

ভবনের চূড়ান্ত অনুমোদনের চিঠিতে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিনের স্বাক্ষর ভূয়া বলে এসিল্যান্ড দাবি করলেও উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, ‘এসিল্যান্ড আমাকে নকশা অনুমোদনের একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। যাতে দেখা যায় স্বাক্ষরটি আমার নয়। আমি ফাইলটি পুনরায় পর্যালোচনা করার জন্য সভা আহ্বান করেছি।’

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।