আনোয়ারায় জরিমানা-অভিযানেও থামছে না ফসলি জমির মাটি কাটা

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় একের পর এক প্রশাসনের অভিযান, জরিমানা, মাটি কাটার যন্ত্র জব্দ ও চক্রের সদস্যদের আটকের পরও থামছে না কৃষকদের ফসলি জমির মাটি কাটা। বিভিন্ন সময়ে পাল্টিয়ে নিচ্ছে কৌশলও। গভীর রাতের মাটি খেকোরা কাটছে ফসলি জমির মাটি। এসব মাটি বিক্রির হিড়িক পড়ে গেছে আনোয়ারার বিভিন্ন গ্রামে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোটি টাকার উন্নয়নের সড়কও। এই মাটি বেচে দেওয়ার সর্বনাশা কা-ে মেতেছে একটি চক্র। সে চক্রে রয়েছে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও। বেচাবিক্রির হিড়িকে বাদ যায়নি খাল পাড়ের মাটিও। এতে যেমন ফসল ফলানোর জায়গা ‘নেই’ হয়ে যাচ্ছে, তেমনি ঝুঁকিতে পড়ছে মানুষের ঘর-বাড়িও।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) ভোর রাতে ফসলি জমির মাটি কাটার দায়ে উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের মো. আবু তাহের নামে চক্রের এক সদস্যকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন উপজেলা প্রশাসন। বারখাইন ইউনিয়নের পূর্ব বারখাইন ভরাপুকুর পাড় এলাকায় এ অভিযান চালায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবদুল্লাহ আল মুমিন।

তিনি বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটায় বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে আবু তাহের নামে এক ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এর আগে, গত রবিবার দিবাগত রাতে বরুমচড়া ইউনিয়নের কানুমাঝির ঘাটে মাটি কাটার দায়ে স্থানীয় শওকত আলী নামে এক ব্যক্তিকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া হাইলধর ইউনিয়নের মালঘর বাজার এলাকায় আবদুল হালিম নামে এক ব্যক্তিকে ২ লাখ টাকা, চালকদের ২৫ হাজার টাকা ও বারখাইনের ধানপুরা এলাকার শাকিল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেন উপজেলা প্রশাসন। একের পর এক অভিযানেও থামছে মাটি খেকোদের দৌরাত্ম্য। এতে করে ক্ষতি হচ্ছে কৃষকদের।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। তবে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ভারপ্রাপ্ত মো. আবদুল্লাহ্ আল মুমিন অভিযান চালিয়ে মাটি কাটার যন্ত্র জব্দসহ কয়েক জনকে জরিমানাও করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ফসলি জমির মাটি কাটছে একটি চক্র। এ চক্রটি ইউনিয়নের দক্ষিণ গহিরা, দক্ষিণ পরুয়াপাড়া, পশ্চিম রায়পুর এজাহারুল উলুম মাদ্রাসার পাশে জমিতে কাটতে কৃষকদের ফসলি জমির মাটি। সে চক্রে জড়িত রয়েছে রাজনৈতিক নেতারা। এছাড়াও বারশত, জুঁইদন্ডী, বটতলী, বারখাইন, বরুমচড়া, পরৈকোড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় কাটছে মাটি। মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের টাকার লোভ দেখিয়ে ফসলি জমি নদীর পাড়সহ বিভিন্ন স্থানে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে তারা। বাদ পড়েনি পুকুরও, পুকুরের মাটি কেটে বিক্রি করছেন বিভিন্নস্থানে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কৃষকদের ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করলেও তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। প্রভাব দেখিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ধুলোবালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। আর এভাবে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে জমির শ্রেণী পরিবর্তন হচ্ছে। কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন হয়ে নালা অথবা জলকড়া জমিতে পরিণত হচ্ছে। আর বিলীন হচ্ছে গ্রামও। এতে কৃষকদের ক্ষতিসহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোটি টাকার উন্নয়নের সড়কও। ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নিয়ে গেলেও কৃষি অফিসের কোনো ভূমিকাও দেখা যাচ্ছে না কৃষকদের জন্য।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবদুল্লাহ আল মুমিন বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটার দায়ে ইতিমধ্যে কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। মাটি কাটার জড়িত চক্রটি কৌশলে রাতের আঁধারে কাটছে ফসলি জমির মাটি। তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।