আপদ—‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ সরায় পারকি ফিরছে স্বরূপে, খেলছে লাল কাঁকড়া

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পরই আনোয়ারার পারকি সৈকত পর্যটকদের পছন্দের একটি নাম। আনোয়ারার আরও পর্যটন কেন্দ্রের পাশাপাশি পারকিতে মানুষ ছুটে যায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে। সৈকতের আপদ-ক্রিস্টাল গোল্ড সরিয়ে নেওয়ায় পারকি বিপর্যয়ের সময়টা কাটিয়ে ফিরেছে বালুময় চরে।

ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে পর্যটকদের ঢল নামবে বলে ধারণা করছেন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। আর ১৩ একর জমিতে পর্যটন কর্পোরেশনের চলমান ট্যুরিজম জোন প্রকল্প সম্পন্ন হলে বদলে যাবে পুরো এলাকার চিত্র।

বুধবার (২৯ জুন) বিকালে পারকি সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতের বালুচরে পর্যটকরা মেতেছেন আনন্দে। কেউ-কেউ খেলছেন ফুটবল, দল বেধে কেউ কেউ নেমেছেন পানিতে। ক্রিস্টাল গোল্ড সরায় পুরো সৈকতের কোথাও কাদা নেই। ঠিক পাঁচ বছর আগের অবস্থানে ফিরেছে পারকি। বালির ভেতর দৌঁড়ে লুকাচ্ছে লাল কাকঁড়া।

২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র কবলে পড়ে পারকি সৈকতে আটকা পড়ে ঋণ খেলাপি মালিকের জাহাজ ক্রিস্টাল গোল্ড। আইনী জটিলতা ক্রিস্টাল গোল্ড সরতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ বছর। ক্রিস্টাল গোল্ড আটকা পড়ার পর ধীরে ধীরে পারকির বেলাভূমি পরিণত হয় কাদামাটির পাড়ে। ফলে পর্যটকদের পড়তে হতো বিড়ম্বনায়। আটকে পড়া জাহাজের কারণে ১৯৯৩-৯৪ সালে বনবিভাগের প্রায় ৮০ হেক্টর জায়গায় আর্কিটেকচারাল পদ্ধতিতে লাগানো ঝাউগাছগুলো বিলীন হতে থাকে।

আপদ—‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ সরায় পারকি ফিরছে স্বরূপে, খেলছে লাল কাঁকড়া 1
ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজ আটকে পড়ার প্রভাবে সৈকতে কাদার স্তুপ

আর কাদার কারণে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে দেশের জাতীয় পত্রিকা গুলোতে সংবাদ প্রকাশ হলে অবশেষে গত জানুয়ারীতে ‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ জাহাজটি কেটে সরিয়ে নেওয়া হয়। জাহাজটি সরিয়ে নেওয়ার পর থেকে সৈকতে আবারও পানির ঢেউয়ে বালি জমতে শুরু করে। এতে গোড়ায়ও বালি জমায় সতেজ হয়ে উঠেছে ঝাউ গাছগুলো।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, আটকে পড়া জাহাজ ক্রিস্টাল গোল্ডের কারণে পারকি সৈকত ধ্বংসের মুখে পড়েছিল। পারকি তার প্রাকৃতি সৌন্দর্য্য হারিয়ে ছিল। বিষয়টি লক্ষ্য করে দ্রুত জাহাজটি সরোনোর ব্যবস্থা করা হয়। এখন সৈকতের রূপ ফিরে এসেছে। আশা করছি আগামী ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের প্রথম পছন্দের তালিকায় পারকি সৈকত স্থান পাবে।

আপদ—‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ সরায় পারকি ফিরছে স্বরূপে, খেলছে লাল কাঁকড়া 2
সৈকতে এখন খেলছে লাল কাঁকড়া

বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ কাইয়ূম শাহ্ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদয় দৃষ্টি ও স্থানীয় সাংসদ ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির প্রচেষ্টায় পর্যটন কর্পোরেশনের ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ একর জমিতে গড়ে উঠছে ট্যুরিজম জোন। ট্যুরিজম জোনে পর্যটকদের জন্য রয়েছেন আকর্ষণীয় রিসোর্ট, আবাসিক হোটেল, বিনোদন কেন্দ্র, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ফাঁড়িসহ থাকবে নানা সুযোগ সুবিধাও। এসব বাস্তবায়ন হলে বিশ্বমানের পর্যটন এলাকায় রূপ নেবে পারকি। এক কথায় উন্নয়নের হাওয়া চলছে পুরো এলাকায়। এমন এক পরিস্থিতিতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যা কয়েক বছর আগে কল্পনাও করেনি কেউ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।