আপনাকে শৈশবে ফেরাবে ড. শিশির ও সাংবাদিক রাসেলের ‘স্কুলবেলার ছড়া-কবিতা’

কবি নজরুল ইসলাম ‘খোকার সাধ’ কবিতায় লিখেছেন—আমি হব সকাল বেলার পাখি, সবার আগে কুসুম-বাগে উঠব আমি ডাকি। সুফিয়া কামাল ‘প্রার্থনা’ কবিতায় লিখেছেন-তুলি দুই হাত করি মোনাজাত, হে রহিম রহমান। কিংবা যোগীন্দ্রনাথ সরকারের আতা গাছে তোতা পাখি, ডালিম গাছে মৌ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদে এলো বান, শিব ঠাকুরের বিয়ে হল, তিন কন্যা দান।
আরও আছে কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’, রজনীকান্ত সেনের পরোপকার, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘মানুষ জাতি’ জসিম উদ্দিনের ‘রুপাই’, শামসুর রাহমানের ‘ট্রেন’ আল মাহমুদের ‘নোলক’সহ অসংখ্য কবিতা-ছড়া। যার প্রতিটি লাইন পাঠককে নিয়ে যাবে তার শৈশবে। প্রতিটি পৃষ্ঠায় পাঠক হবেন স্মৃতিকাতর।

প্রতিটি মানুষের জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম সময় হলো তার শৈশব-কৈশোর। মানবজীবন অতি ক্ষুদ্র, সময় গড়িয়ে যায় দ্রুতই। পরিণত বয়সের যে কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয় তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠতম, সুন্দরতম এবং মধুরতম সময় কোনটি? সবাই চোখ বন্ধ করে এক কথায় উত্তর দেবেন-‘স্কুলজীবন’। সেই সময়ের পাঠ্যসূচির কথা মনে পড়লেই অবধারিতভাবে প্রত্যেকের মনে পড়ে যায় শৈশবের মিষ্টি ছড়া কিংবা কবিতার প্রিয় কোনো পঙক্তি।

চট্টগ্রামের একুশে বই মেলায় শেষ মুহূর্তে আসা ব্যতিক্রমধর্মী বইটি যৌথভাবে সংকলন করেছেন শিক্ষা গবেষক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষক প্রশিক্ষক ড. শামসুদ্দীন শিশির ও সাংবাদিক আবু মোশাররফ রাসেল।

মা-বাবার মুখে মুখে কিংবা স্কুলে শিক্ষকের সাথে মিষ্টি ছড়া দিয়ে শুরু হয় শিশুর প্রথম পাঠ। যে বয়সে মস্তিষ্কের গঠন আর শারীরিক-মানসিক বিকাশ শুরু হয় সেই সময়ে পড়া মিষ্টি কোনো ছড়া কিংবা প্রিয় কবিতারা গেঁথে যায় কচি মনের গভীরে।

স্কুলবেলায় প্রথম শ্রেণী থেকে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণির বইয়ে পাঠ্য হয়েছে বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের লেখা নানা ধরনের ছড়া-কবিতা। শিশুর বয়স অনুযায়ী তাকে আনন্দ দেওয়া এবং সুস্থ মনন গঠনের অংশ হিসেবে পাঠ্য হওয়া সেসব কবিতা ধাপে ধাপে তার মানসপটে পরিবর্তন ঘটাতে থাকে।

স্কুলজীবনের কোনো ছড়া শিশুকে আনন্দ দেয়, কোনো ছড়া তাকে ভাবিয়ে তুলে গভীর কোনো বিষয়ে, কোনো কবিতা তাকে জীবনচলার পথে বাধা ডিঙানোর শিক্ষা দেয়, কোনো কবিতা তাকে করে তুলে দৃঢ় সাহসী-অসীম প্রত্যয়ী, কোনো কবিতা তার ভেতরে জাগিয়ে তুলে নৈতিক-দর্শন, মানবিকচর্চার সংস্কৃতি। এভাবে সেই ছড়া-কবিতাগুলো প্রতিটি মানুষের জীবনে শৈশবের আনন্দ, কৈশোরের ভালোলাগা কিংবা প্রিয় অনুষঙ্গ হয়ে চিরদিন স্মৃতিতে ভেসে থাকে। কিন্তু সময়ে সাথে সাথে, বয়সের সাথে সাথে স্মৃতি থেকে সেগুলো হারিয়ে যেতে থাকে, অনেক ক্ষেত্রে পাঠ্যবই থেকেও উঠে যায় সময়ের প্রয়োজনে।

বই নিয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক আবু মোশাররফ রাসেল বলেন, স্কুলবেলার সেই ছড়া-কবিতাগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হৃদয় জুড়িয়ে, আমাদের আবহমান সংস্কৃতির সাথে মিশে-চিরন্তন ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে। কোলাহলপূর্ণ জীবনের ক্ষণিক অবসরে মানুষ যখন তার ফেলে আসা শৈশবকে হাতড়ে বেড়ায়…কখনো কখনো অনেক চেষ্টা করেও খোঁজে পাওয়া যায় না মিষ্টি ছড়াটি কিংবা কবিতার প্রিয় পংক্তি।
ধীরে ধীরে বিস্মৃত হতে যাওয়া সেই ছড়া-কবিতাগুলো এক মলাটে স্মৃতিকাতর প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে আমাদের এই সংকলন। আশা করছি, সংকলনটি সবার ভালোবাসার যোগ্য হবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।