আফছারুল আমীনের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব গৃহীত

চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী ডা. মো. আফছারুল আমীনের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশনে রোববার (৪ জুন) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। শোক প্রস্তাবে ডা. মো. আফছারুল আমীনের মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ থেকে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়।

মো. আফছারুল আমীন ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং গত ২ জুন আনুমানিক বিকেল ৪টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

মো. আফছারুল আমীন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, চট্টগ্রামের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ, তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

মো. আফছারুল আমীন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮৬ চট্টগ্রাম-৯ এবং দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮৭ চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদে তিনি প্রথমে সরকারের নৌ-পরিবহন মন্ত্রী এবং পরবর্তীতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

দশম জাতীয় সংসদে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন।

শোক প্রস্তাবে স্পিকার বলেন, ‘এ সংসদ প্রস্তাব করছে যে, একাদশ জাতীয় সংসদের ২৮৭ চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী মো. আফছারুল আমীনের মৃত্যুতে দেশ একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং নিবেদিত প্রাণ সমাজসেবককে হারালো। তার জীবন বৃত্তান্ত সম্বলিত শোকপ্রস্তাব আমি এ মহান সংসদে উত্থাপন করছি। এ সংসদ তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ, তার রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।’

প্রথা অনুযায়ী সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন-এর স্মরণে সংসদে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।

অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সরকারি দলের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মোতাহার হোসেন, ওয়াসিকা আয়শা খান, জাতীয় পার্টির সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ ও মুজিবুল হক। শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়। পরে মরহুম আফছারুল আমীনের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী।

এরপর সংসদের নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যমান সংসদের সদস্যের মৃত্যুতে দিনের অন্যসব কার্যসূচি স্থগিত করে সংসদে বৈঠক মুলতবি করা হয়। তবে মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্ন জিজ্ঞাসা এবং উত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।