ঈদের পরে আন্দোলন নয়, বিএনপির নতুন কমিটি

শিগগিরই নতুন কমিটি পাচ্ছে চট্টগ্রাম নগর বিএনপি। সম্ভাব্য এই কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে দুই-এক দিনের মধ্যেই। নগর বিএনপি যে বিপর্যস্থ অবস্থায় আছে সেখান থেকে উত্তরণের জন্য চলমান কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এমনটাই নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম খবরকে। তারা জানান, নগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি আরও আগে ভেঙ্গে দেওয়ার কথা ছিল। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে আহ্বায়ক-সদস্য সচিব করা হলে দল আগের মতোই অগোছালো রয়ে গেছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটে আসেনি কাঙ্খিত সাংগঠনিক ভিত্তি।

উপরন্তু দল পুনর্গঠনের যে পক্রিয়া চলছে তাতে নানা রকম বাধা পাচ্ছেন এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত নেতারা। তাদের স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতেই মূলত বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে তিন সদস্যের চট্টগ্রাম নগর কমিটি ঘোষণা করেছিল দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল একমাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার। কিন্তু এক মাসের পরিবর্তে এগারো মাস সময় নিয়ে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ১৫১ সদস্যের স্থলে ২৭৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।

নগর বিএনপির সেই ২৭৫ সদস্যের কমিটির অনেকেই পদ বহন করেন করেননি। সেই কমিটিতে প্রয়াত টিংকু দাশকে করা হয়েছিল দপ্তর সম্পাদক। তার রাজনৈতিক কর্মী কামরুলকে করা হয়েছিল সাংগঠনিক সম্পাদক। কামরুলের মতো আরও একাধিক জুনিয়রকে দেওয়া হয়েছিল বড় পদ। ক্ষোভে টিংকু দাশ নগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহী ছিলেন। সেই ক্ষোভ নিয়ে দুনিয়ার মায়াই ত্যাগ করেন টিংকু দাশ।

এরপর একাধিকবার নগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হাই-কমান্ডের হাতে পায়ে ধরে সময়ে নেওয়া সেই কমিটির বছরের মাথায় ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদাত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়।

গত প্রায় দেড় বছরেও সেই আহ্বায়ক কমিটি হাইকমান্ডের আশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ গত মার্চে অনুষ্ঠিত স্কাইপে বৈঠকে নগর নেতাদের বলে দেওয়া হয়েছে- ‘দলের জন্য তোমাদের ত্যাগ আছে। তাই অপমান করলাম না। পদ থেকে সরিয়ে দিলে কেউ সালামও দিবে না। দলের জন্য, নিজের জন্য মিলে মিশে কাজ করো।’

নগর নেতারা স্কাইপ বৈঠকে গিয়েছিলেন যে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে জেনেই। ওই যাত্রায় আহ্বায়ক কমিটি না ভেঙ্গে ছাড় দেওয়ায় বৈঠক শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ স্ট্যাটাস দিয়েছিল ফেসবুকে। তবে সেই স্বস্তি বেশী দিন স্থায়ী হচ্ছে না। দলের প্রতি আন্তরিকতা থাকলেও পদ ভার বহণ সম্ভব হচ্ছে না সেটা দলের নীতি নির্ধারকদের কাছে পরিস্কার।

বিএনপির নীতি নির্ধারকরা জানান, দলের জন্য চটকদার বক্তৃতাবাজির চেয়ে দল গোছানোয় দক্ষ নেতাই দরকার। বিএনপি গণমানুষের দল, দল পরিচালনায় দক্ষ লোক লাগবে। বিগত প্রায় অর্ধযুগ বর্তমান সেটআপ দল গোছাতে পারেনি। এর আগের কমিটির ব্যর্থতার ধারাবাহিকতাই তারা বজায় রেখে মাত্র।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং আহ্বায়ক কমিটির ব্যর্থতার পর দল গোছাতে যুক্ত করা হয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খানের নেতৃত্বে একটি টিমকে। টিমকে নগর নেতারা যথাযথ সহযোগিতা করছেন না বলে কমিটিই ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে।

নতুন কমিটি কোন ফরমেটে হবে জানতে চাইলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ‘একজন আহ্বায়ক থাকবে। তার সাথে কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সদস্য থাকবেন। নির্দিষ্ট টাইম-ফ্রেমে দল গুছিয়ে নেওয়ার কমিটেড নেতার হাতেই আমরা দায়িত্ব দিচ্ছি।’

তবে এবার যাকেই নেতৃত্বে আনা হোক, তাকে গ্রুপ তৈরির সুযোগ দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেন, দলের পদে এসে দলের চেয়ে ভাইয়ের অনুসারীদের দিয়ে সংগঠন, সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।