উচ্চ মাধ্যমিকেও ইয়ার লস দিয়েছিলেন রুকু, আত্মহত্যার পেছনে নির্যাতন-গর্ভপাত

পরীক্ষা দিতে না পারার কারণে চবি ছাত্রী রোকেয়া সুলতানা রুকু আত্মহত্যা করেননি। বরং স্বামীর নির্যাতনের কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এমনটাই দাবি করেছেন রুকুর বড়ভাই আল আমিন সরকার বিপুল।

তিনি মুঠোফোনে বলেন, রোকেয়া ইয়ার লসের কারণে আত্মহত্যা করেনি। সে ২০১৯ সালেও ইন্টারে থাকতেও ইয়ার লস দিয়েছিল। ইয়ার লসের কারণে আত্মহত্যা করার মত মেয়ে সে না। পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করার পর কাউছারের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের কারণেই আমার বোনটা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এসব কথা বলতে গিয়ে আল আমিন কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এদিকে লাশ উদ্ধারের আগের দিনওই ছাত্রীর স্বামীর দ্বারা মারধরের স্বীকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আত্মহত্যার আগের দিন শুক্রবার ইফতারের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু উদ্যানের সামনে ওই ছাত্রীকে স্বামীর হাতে মারধরের শিকার হতে দেখেছেন কয়েকজন ছাত্র।

প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার ইফতারের পর আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের দিকে যাই। সেখানে সামনে এই ছেলেটিকে মেয়েটির সঙ্গে উচ্চ স্বরে কথা বলতে এবং থাপ্পড় দিতে দেখি। মেয়েটি চুপ করে দাঁড়িয়েছিল। এসময় ছেলেটি বলছিল “ওষুধ খাবি না কেন? আমাদের দায়ী করতে? তোকে কীভাবে মারতে হবে? গলা টিপে নাকি অন্য কোনোভাবে? তবে তিনি কিসের ঔষধ খাওয়ার জন্য মেয়েটিকে জোর করছিলেন সে বিষয়ে জানতে পারিনি”

জানা গেছে, দুই বছর আগে রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের অনার্সের ছাত্র মো. কাউসারের সঙ্গে ওই ছাত্রীর বিয়ে হয়। এর মধ্যে চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গতমাসে ওই ছাত্রী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গর্ভপাত করেন। এ কারণেই মূলত তিনি পরীক্ষা দিতে পারেননি। তবে বিয়ে, গর্ভপাত এসবের কিছুই জানত না পরিবার। সহপাঠীদের থেকেও বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। আত্মহত্যার পরই মূলত এসব বিষয় সামনে আসে।

রোকেয়া চবির ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। বোনের মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন রোকেয়ার ভাই আল আমিন।
তিনি বলেন, আমার বোনটা নিষ্পাপ বোনটাকে ওই ছেলে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে। সে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বাও ছিল। কাউসার জোর করে তাকে গর্ভপাত করাতে বাধ্য করেছে। রুকু গর্ভপাত করাতে চায়নি। এরপর কাউসার ঢাকা থেকে রুকুর ক্যাম্পাসে গিয়ে ওকে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। যেটার প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্ববিদ্যালয়েরই বহু শিক্ষার্থী। তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলেও এর প্রমাণ মিলবে।

তিনি আরও বলেন, আমার বোনকে তার বিভাগের শিক্ষকরা স্পেশাল পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরীক্ষার কারণে আমার বোন আত্মহত্যা করেনি। সে আত্মহত্যা করতে পারে না। স্বামীর নির্যাতনের কারণেই মূলত আত্মহত্যা করেছে।

তবে এ বিষয়ে জানার জন্য রুকুর স্বামী কাউসারকে ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম শিকদার। তিনি বলেম, আমরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনো স্পষ্ট প্রমাণ পাইনি। তাছাড়া ছাত্রীর পরিবার থেকে এখনও কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। এ নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি আমরা সিসিটিভি ফুটেজও চেক করতেছি। কারো কাছে ওরকম কোনো প্রমাণ থাকলে সে যেন আমাদেরকে দেয়।

তিনি আরও বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও আসেনি। যদি এরকম কোনো ঘটনা থাকে, তাহলে অবশ্যই তা উঠে আসবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।