এক হাতে ইফতারি, অন্য হাতে সড়কের যান নিয়ন্ত্রণ

চলছে পবিত্র মাহে রমজান। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে সড়কে থাকে ঘরমুখো মানুষের বাড়তি চাপ। সেই সাথে ঈদ ঘনিয়ে আসায় বেড়েছে যানচলাচলও। মানুষ হরেক রকমের ইফতারের আইটেম নিয়ে ছুটে যান নিজ গন্তব্যে। আবার কেউ কেউ ছুটেন বিভিন্ন ইফতারের আয়োজনে অংশ নিতে।
কিন্তু রোজা রেখে চৈত্রের দাবদাহে সারাদিন দায়িত্ব পালন করে ইফতারের সময়ও থামেন না ট্রাফিক সদস্যরা। ঘরমুখো মানুষ যাতে নিরাপদ-নিশ্চিন্তে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন সেজন্য নীরবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যরা। কখনও কখনও এক হাতে ইফতারি, অন্য হাতে ট্রাফিক সংকেত দিতেও দেখা যায় তাদের। ইফতারি বলতে বাহারি খাবারের আয়োজনও নয়, কেবল এক বোতল পানি!

সরজমিনে দেখা গেছে, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ আগ্রাবাদ মোড়, লালখান বাজার ইস্পাহানি মোড়, ওয়াসার মোড়, টাইগার পাস, জিইসি, নিউমার্কেট মোড়, বহদ্দারহাট, ইপিজেড মোড়, একেখান মোড়সহ যান চলাচলের চাপে থাকা সব জায়গায় সার্বক্ষণিক সতর্ক ট্রাফিক পুলিশ। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, আদালত, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসহ পুরো নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর সড়ক যানজটমুক্ত রাখতে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।

ইফতারের সময় হলে নিকটস্থ পুলিশ বক্স থেকে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইফতারির প্যাকেট, পানি। এ সময় কেউ সময় করে পাশের কোন বেঞ্চে বসে, কিংবা সড়ক বিভাজনে বসে ইফতার সেরে নিচ্ছেন। আবার কেউ এক হাতে ট্রাফিক সংকেত দিয়ে অন্য হাত দিয়ে পানি পান করছেন।

নগরীর প্রবর্তক মোড় এলাকায় সাইফুদ্দিন নামের এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের ছবিতে নজর আটকে যায় সবার। সারাদিনের সিয়াম পালন শেষে দায়িত্বও পালনেরও তিনি বিন্দুমাত্র শিথিলতা দেখাননি। চোখে মুখে রয়েছে ক্লান্তির ছাপ , পিপাসায় কাতর তবুও সড়কে দাঁড়িয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বিকেল পেরিয়ে মাগরিবের আজান পড়ে যাওয়ায় ট্রাফিক সংকেত দেওয়া অবস্থাতেই পানি দিয়ে ইফতার সেরে নিয়েছেন তিনি।

সাইফুদ্দিনের মতো এরকম আরও অনেক পুলিশ সদস্যের ইফতার হয় এভাবে। কেবল সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে চৈত্রের এই প্রখর রোদে রোজা রেখে ধোঁয়া-ধূলোবালি আর উচ্চ শব্দ মাথায় করে বিরতিহীন দাঁড়িয়ে রাস্তায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। মানুষদের ঘর কিংবা গন্তব্যে যাতায়াত সহজ করতে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন তারা।

ট্রাফিক পুলিশদের এমন নিরলস দায়িত্বশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভুলেননি চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) শীর্ষ কর্মকর্তা তথা অভিভাবক—সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।

এক হাতে ইফতারি, অন্য হাতে সড়কের যান নিয়ন্ত্রণ 1

সোমবার এমন কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সাথে ইফতার করেছেন তিনি। ইফতারের পূর্বে তিনি নগরীর প্রবর্তক মোড় ট্রাফিক পয়েন্টে দাঁড়িয়ে সরজমিনে ডিউটি তদারক ও পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যবেক্ষণকালে তিনি যানজট নিরসনকল্পে ট্রাফিক পুলিশদের প্রতি বিভিন্ন দিক-নির্দেশনাও প্রদান করেন। এরপর অসহায়, দরিদ্র ও পথশিশুদের মাঝে নিজ হাতে ইফতার বিতরণ করেন তিনি।

সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ইফতারের সময়ও ট্রাফিক সদস্যরা তাদের কর্তব্যে অবিচল থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইফতার করছেন। তাদের এ নিরলস দায়িত্বশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং তাদের কষ্টের সামান্য অংশীদার হওয়ার জন্য আমরা ইফতারের আয়োজন করি। নগরের নাগরিকদের বাসায় ইফতার করার সুযোগ করে দিতে পুলিশ সদস্যরা যে কষ্ট করছেন তাদের এই সম্মান প্রাপ্য।

নগর ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) জয়নুল আবেদীন টিটু বলেন, ট্রাফিক সদস্যদের দায়িত্বপালন দেখতে কমিশনার স্যার নিজে ছুঁটে এসেছেন। এতে আমাদের দায়িত্বরত সদস্যদের কর্মস্পৃহা আরো জোরদার হয়েছে। স্যারের এমন ভিজিটে ট্রাফিক বিভাগ কৃতজ্ঞ।

ইফতারের আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) এম এ মাসুদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) আ স ম মাহতাব উদ্দিন, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. আব্দুল ওয়ারীশসহ পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।