‘এ’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশের আগেই ছেলের ফল পেয়ে গেলেন চবি কর্মকর্তা!

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত হলেও এখনও প্রকাশিত না হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা। কেউ কেউ পরীক্ষায় অনিয়ম হয়েছে কি না এমন সংশয়ও প্রকাশ করেছেন। যদিও ফলাফল নির্ভুল করতেই সময় লাগছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে ফলাফল প্রকাশের আগেই নিজের ছেলের ফলাফল পেয়েছেন বলে দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাতিয়ে তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা!

রোববার (২১ মে) সন্ধ্যা ৬ টা ৪৫ মিনিটের দিকে তার ছেলে ‘এ’ ইউনিটে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছেন জানিয়ে নিজের ফেইসবুক একাউন্টে পোস্ট করেন। যার স্ক্রিনশর্ট চট্টগ্রাম খবরের কাছে সংরক্ষিত আছে৷ যদিও পোস্ট করার কিছুক্ষণ পর তিনি আবার সেটি ডিলিট করে দেন।

এই কর্মকর্তার নাম মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কশীট শাখায় উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত আছেন বলে জানা গেছে। ফেইসবুক পোস্টে তিনি লিখেন,“আলহামদুলিল্লাহ আমার ছেলে আবীর চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের A Unit(সায়েন্স ফ্যাকাল্টি) ভর্তি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১৬৯৬ এবং কোটা তালিকায় ৩য় হয়েছে। সবার কাছে দোয়া প্রার্থী।”

অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘুরে ফলাফল প্রকাশের কোনো সূত্রই খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলও ফলাফল প্রকাশ করেননি বলে জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—কিভাবে নিজের ছেলের ফলাফল জানলেন চবির এই কর্মকার্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবির আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনও ফলাফল প্রকাশ করিনি। তবে আমাদের হাতে ফলাফল এসেছে। ক্রসচেক করে আমরা ফলাফল প্রকাশ করব। তবে ওই অভিভাবক প্রকাশেরই আগেই কীভাবে ফলাফল পেয়েছেন সেটা আমি জানি না। আমাদের মাধ্যমে রেজাল্ট জানা সম্ভব না। এর মানে উনি গোপনে কারো কাছ থেকে জেনে নিয়েছেন।

এদিকে ফলাফল কিভাবে পেয়েছেন এমন বিষয়ে জানতে চাইলে চবির এই কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী মুঠোফোনে বলেন, আমার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই ফলাফল পেয়েছে। পাওয়ার পর আমাকে জানিয়েছেন।

যদিও এর কিছুক্ষণ পর তিনি ফেইসবুক থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেন। পরবর্তীতে আবার ফোন করা হলে তিনি খবরটিকে উড়ো বলে এড়িয়ে যান। এভাবে পোস্ট করা উচিত হয়নি বলেও স্বীকার করেন।

জানতে চাইলে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার জয়েন্ট কো-অর্ডিনেটর ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রাশেদ মোস্তফা বলেন, প্রকাশ হওয়ার আগে ফলাফল জানতে পারার কথা না। উনি কিভাবে জানতে পারলেন এ বিষয়ে আমি জানিনা।

এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কোনো ঘাটতি আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। উনি কিভাবে ফলাফলটা পেয়েছেন এ ব্যাপারে আমার ধারণা নেই।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ এবং ১৭ মে বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিশারিজ অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। দু’দিনে চার শিফটে মোট ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন। ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মোট ৭৪ হাজার ৭০৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৯ হাজার ৬০৯ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। গত ১৯ মে রাতে ফলাফল প্রকাশের কথা জানানো হলেও এখনও সে ফলাফলের কোন হদিস নেই!

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।