কর্ণফুলীতে ঐতিহ্যবাহী সাম্পান বাইচ

এক সময় বৈশাখের অপেক্ষায় থাকতো কর্ণফুলীর দুই তীরের মানুষ। সব আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল নৌকা বাইচ। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছিল ঐতিহ্যের সেই নৌকা বাইচ। এখন শুধু ঐতিহ্য রক্ষা নয়, চট্টগ্রামের প্রাণ কর্ণফুলীকে বাঁচানোর লড়াইয়েও নামতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। কর্ণফুলীকে দখল-দূষণমুক্ত রাখতে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো গত তিনদিন ধরে ধারাবাহিক ভাবে পালন করে আসছিল নানা কর্মসূচী।

শেষদিন শুক্রবার বিকেল ৩টায় নগরীর অভয়মিত্র ঘাট থেকে চরপাথরঘাটা সিডিএ মাঠ এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় সাম্পান খেলা। একই দিন সন্ধ্যায় চরপাথরঘাটা সিডিএ মাঠে বসে চাটগাঁইয়া সাংস্কৃতিক মেলা। কর্ণফুলীকে বাঁচাতে বিগত এক যুগ ধরে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে স্থানীয়ভাবে আয়োজন করা হয় সাম্পান বাইচ। এতে স্থানীয় কয়েক ডজন সাম্পান সমিতি অংশ নেয়। এদিকে বিকেল থেকে সাম্পান বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে হাজারো মানুষের ঢল নামে।

প্রথমদিন বুধবার কর্ণফুলী নদীর ওপর ভাসমান নৌকা, নৌকার ওপরই তৈরি করা হয়েছে ভাসমান নান্দনিক মঞ্চ। এ মঞ্চ থেকেই কর্ণফুলী নদী দখল, ভরাট ও দূষণের প্রতিবাদের দ্যুতি ছড়িয়েছে ‘বিনি সুতার মালা’। ভাসমান এই মঞ্চেই আঞ্চলিক গান, পাহাড়ি নৃত্য, গান ও বক্তব্য দিয়ে জানানো হয়েছে তীব্র প্রতিবাদ। গানে গানে এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে প্রতিবাদের ভাষা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নদী ব্যবহারকারীদের মাঝে। চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র ও সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তিনদিন ব্যাপী এ কর্মসূচির আয়োজন করে। বিনি সুতার মালার ভাসমান মঞ্চ কর্ণফুলী নদী সদরঘাট চরপাথরঘাটা সাম্পান ঘাট, গাইজ্জার ঘাট, তোতার বাপের হাট, কালুরঘাট বোয়ালখালী হয়ে নগরীর ব্রিজঘাট, অভয়মিত্র ঘাট ও বাংলাবাজার এসে শেষ হয়। নগরীর সদরঘাট থেকে বিনি সুতার মালা অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সাম্পান খেলা ও চাটগাঁইয়া সাংস্কৃতিক মেলার প্রধান সমন্বয়ক শাহেদুর রহমান শাহেদ আর সভাপতিত্ব করেন উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী ফরিদ।

দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে সাম্পান শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। এ রায় বাস্তবায়নে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

শেষদিন শুক্রবার বিকেলে নগরীর অভয়মিত্র ঘাট থেকে চরপাথরঘাটা সিডিএ মাঠ এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় সাম্পান খেলা আর সন্ধ্যায় চরপাথরঘাটা সিডিএ মাঠে বসে চাটগাঁইয়া সাংস্কৃতিক মেলা। এতে স্থানীয় কয়েক ডজন সাম্পান সমিতি অংশ নেয়। সাম্পান বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে হাজারো মানুষের ঢল নামে।

কর্ণফুলী নদী দখল-দূষণ নিয়ে কথা হয় সাম্পানের মাঝিমাল্লাদের সঙ্গে। মাঝিরা বলেন, নদীর পানি কালো হয়ে গেছে। দূষণে এ নদীর প্রাণ যায় যায়। এ ছাড়া নদীর তীরে নানা সময়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। নদী না বাঁচলে তাঁদের না খেয়ে থাকতে হবে। কর্ণফুলী নদী বাঁচলে আমরাও বাঁচব, দেশও বাঁচবে।

উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী ফরিদ জানান, কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে হবে। কর্ণফুলী হলো দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। অবৈধভাবে কর্ণফুলী নদীর তীর দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কর্ণফুলীর পাড়ের প্রায় চারশত কারখানার বর্জ্য এবং নগরের প্রায় ৬০ লাখ মানুষের মানববর্জ্য, পলিথিন-প্লাস্টিক প্রতিদিন নদীতে পড়ে। বর্তমানে নদীর প্রায় সাত মিটার গভীরতা নষ্ট হয়ে গেছে শুধু পলিথিনের কারণে।

চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যাপক ইদ্রিস আলীর এক গবেষণায়  দেখা যায়, অতীতে কালুরঘাট থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর প্রস্থ ছিল ৬০০ থেকে ৯০০ মিটার। এখন শাহ আমানত সেতু এলাকায় প্রস্থ ৫২০ মিটার।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।