কসাই নাসিরকে ধরতে পুলিশের অভিযান, মারা গেলেন ‘স্ট্রোকে’

চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার শহীদ নগর এলাকায় আলোচিত মো. নাসির উদ্দিন (৫৫) প্রকাশ কসাই নাসিরকে গ্রেপ্তার করতে গেলে পুলিশের অভিযানের পরপরই তিনি মারা যান। নাসির পশ্চিম শহীদ নগর এলাকার মৃত বজল আহমদের ছেলে। নাসির পেশায় কসাই ছিলেন। তবে পেশার চেয়ে তিনি বেশী আলোচিত জঙ্গলসলিমপুরের ছিন্নমূল বস্তিবাসীর ব্যনারে শতশত পাহাড় উচ্ছেদের ক্ষেত্রে ভূমিকায়। র‌্যাবের ক্রসফায়ারে মারা যাওয়া আক্কাসের গডফাদার ছিলেন কসাই নাসির। নাসির-আক্কাস মিলেই জঙ্গলসলিমপুরের শতশত পাহাড় উচ্ছেদ করে প্লট তৈরি করে বিক্রির অভিযোগ আছে।
সম্প্রতি নাসিরের বিরুদ্ধে জেলার গরু চোর সিন্ডিকেটের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়টি আদালতের স্বীকারোক্তি দেওয়া এক আসামির জবানিতে উঠে আসে বলে জানায় পুলিশ।

শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কসাই নাসিরের বড় ভাই রফিক উদ্দিন চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, গতরাতে পুলিশ আমার ভাইকে ধরতে এসেছিল। নাসির অসুস্থ ছিল, তার হার্টে রিং পরানো আছে। সে স্ট্রোক করে মারা গেছে। নাসিরের এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে বলেও জানান তার ভাই রফিক।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের গোয়েন্দারা নাসিরের বাড়িতে অভিযান চালায়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক ও অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তা নুর আহম্মদ চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, ফটিকছড়ি থানার গরুচুরির একটি মামলায় এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কসাই নাসিরের নাম আসে। থানা থেকে আমাদের অনুরোধ করলে আমরা বায়েজিদ থানার একটি টিমসহ নাসিরকে গ্রেপ্তার করতে তার বাসায় যাই রাত দেড়টায়। প্রায় ৪৫ মিনিট অনুরোধ করার পর তিনি নিজেই দরজা খুলে আমাদের ড্রয়িং রুমে বসতে দেন।
তার ড্রয়িং রুমে আমরা ১০ থেকে ১৫ মিনিট কথা বলি। যে মামলায় উনার নাম আসছে সেটা উনাকে জানিয়ে আমরা আমাদের সাথে নিয়ে আসতে চাই। তিনি অসুস্থ দাবী করলে আমরা শুক্রবার সকালে তাকে বায়েজিদ থানায় পৌঁছে দিতে তার আত্মীয়স্বজনদের বলে আসি।

তিনি আরও বলেন, নাসিরের ঘর থেকে বের হওয়ার পর আমাদের ওপর হামলা হয়। নাসিরের বাসা থেকে আমরা অক্সিজেন পর্যন্ত আসলে খবর আসে নাসির স্ট্রোক করেছেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। আজ শুনছি তিনি মারা গেছে।

জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত পুলিশ ও জেলা পুলিশের মুখপাত্র আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘ফটিকছড়ি থানায় গরু চুরির একটি মামলার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নাসিরের নাম রয়েছে। ফটিকছড়ি পুলিশের অনুরোধে আমাদের গোয়েন্দা দল নাসিরের বাড়িতে অভিযানে যায়। তখন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নাসির ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে তার সহযোগীদের সাহায্যের জন্য চিৎকার করেন।
তিনি আরও বলেন, এক পর্যায়ে নাসির দরজা খুলে দেন এবং প্রায় অর্ধশত মানুষ সেখানে হাজির হয়। তাদের উপস্থিতিতে আমাদের সদস্যদের সাথে তার কথা হয়। তিনি আজ সকালে বায়েজিদ থানায় হাজির হওয়ার কথা ছিল। অসুস্থ দেখে আমাদের ফোর্স ফিরে আসে। আসার সময় তার লোকজন পুলিশের ওপর ঢিল ছোঁড়ে। এরপর আমরা খবর পাই নাসির অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেছে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।’

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।