কোমর ভাঙা ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব বিধবা মা

কেইপিজেডে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনা

চট্টগ্রামের কোরিয়ান কেইপিজেড জোন অফিসে কাজ করার সময় গায়ের ওপর লোহার গেইট পড়ে কোমরের মেরুদন্ড ভেঙে যাওয়া আহত শ্রমিক মো. শফিউল আজমের (২৩) চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন বিধবা মা নুরজাহান বেগম।

ছেলের জন্য একমাত্র শেষ সম্বলটুকুও বিক্রি করে দিয়েছেন বিধবা নুরজাহান বেগম। দেড় বছর ধরে ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে সহায়-সম্বল যা ছিল তা এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এরপর শুরু হওয়া ধারদেনার পথও এখন বন্ধ।

চিকিৎসাবাবদ তার পরিবারের ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এখন আর তার মায়ের কাছে চিকিৎসা করার মত আর টাকা অবশিষ্ট নেই। তার পরিবার টাকার অভাবে এখন আর চিকিৎসা করতে পারছে না। তার ব্যথার যন্ত্রণায় সারারাত কান্না করে, কাউকে ঘুমাতে দেয় না। মায়ের মনে ভয়, অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসা শেষ পর্যন্ত তারা চালিয়ে যেতে পারবেন কিনা। ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখতে অনেক অর্থের দরকার বলে জানিয়েছেন তার মা নুরজাহান বেগম (৫৮)।

তবে ৬ মাস খোঁজখবর নেয়ার পর কতৃপক্ষ আর কোনো খোঁজ নিচ্ছেন না বলেও জানান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি। ২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দুপুরে কোরিয়ান কেইপিডেজের জোন অফিসের লোহার গেইটের কাজ করতে গিয়ে গুরুতরভাবে আহত হন কারখানার মেকানিক মো. শফিউল আজম। সে কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের কচির আহমেদের বাড়ির মৃত মুহাম্মদ হাছানের পুত্র।

আহত মো. শফিউল আজমের মা নুরুজাহান বেগম জানান, চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন ধারাবাহিক চিকিৎসায় আজম স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আরও তিনবছর সময় লাগতে পারে। তার চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে দরিদ্র বিধবা মা পক্ষে ছেলের চিকিৎসা ব্যয় চালিয়ে যাওয়া এখন আর সম্ভব হয়ে উঠছে না। আজমকে বাঁচাতে বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন তার পরিবার। সবার সহযোগিতায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে যুবক আজম।

তিন সন্তানের মধ্যে আজম দ্বিতীয়। ২০০৪ সালে পিতার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে ২০১৪ সালে কেইপিজেডের জোন অফিসের মেকানিক্যাল সেশনে চাকরি নেন সে। ২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দুপুরে দুর্ঘটনার আহত হওয়ার পর কৃতপক্ষ টানা ৬ মাস বেতন দেন এবং চিকিৎসা খরচ বাবদ ৫ লাখ টাকাও দেন ক্ষতিগ্রস্ত শফিউল আজমকে।

আহতের চাচা আনোয়ার হোসেন জানান, যেদিন ঘটনাটি ঘটে তার পরের সপ্তাহে ছিলো তার বড় ভাইয়ের বিয়ে। আমরা সকলে বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। ঘটনার পর আহত অবস্থায় কৃতপক্ষ তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। আমরা মেডিকেল গিয়ে দেখি অজ্ঞান অবস্থায় মেডিকেলের এক কোণে পড়ে আছে। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা প্রাইভেট একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়, সেখানে চিকিৎসা করাতে গিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। প্রতিদিন তাকে দিতে হচ্ছে থেরাপি। আর এ থেরাপি দিতে খরচ হচ্ছে দৈনিক ২ হাজার টাকা। আমরা এলাকাবাসীদের সহযোগিতায় এতোদিন তার চিকিৎসার খরচ চালিয়েছি। কেইপিজেড কৃতপক্ষ ৬ মাসের বেতন ও চিকিৎসা খরচ বাবদ ৫ লাখ টাকা দিলেও এখন আর কোনো খোঁজ-খবর নিচ্ছে না। এতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা খরচ বহন করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব না। তাই সকলের সহযোগিতা কামনা করছি আমরা।

আহত শ্রমিক মো. শফিউল আজম বলেন, ঘটনার আগের দিন বৃহস্পতিবার কাজ শেষ করে বাড়িতে চলে আসি। সেদিন রাতে আমাকে মেকানিক্যাল সেকশনের ম্যানেজার আনোয়ারুল কবির ফোন করে জানান শুক্রবার যেন অফিসে আসি। না আসলে চাকরি থাকবে না। চাকরি বাঁচানোর ভয়ে সকালে যোগদান করি চাকরিতে, দুপুরের দিকে কাজ সময় লোহার গেইট আমার গায়ের ওপর পড়ে এতে আমি অজ্ঞান হয়ে যায়। জ্ঞান ফিরে দেখে আমার সারা শরীর নড়াচড়া করতে পারচ্ছিনা। দেড় বছর ধরে বিছানায় শুয়ে আছি। বাথরুমটা পর্যন্ত বিছানায় করতে হচ্ছে। আমি বাঁচতে চাই, প্লিজ আমাকে বাঁচান।

কেইপিজেডের মেকানিক্যাল সেকশনের ম্যানেজার আনোয়ারুল কবির বলেন, আমাদের কোম্পানির বিধি মোতাবেক আহত শ্রমিককে সবধরণের সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।