ক্যাম্পাসে সাংবাদিক হেনস্তা—বিচারের দাবিতে চবিসাসের কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় বিচারের দাবিতে কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)।
ঘটনার পর থেকে বিচারের দাবিতে ২ বার আল্টিমেটাম দিয়েও প্রশাসন কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এ কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনটি। এসময় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার না হলে আরো কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দেয় তারা।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা মোট ৪ ঘন্টা কলম বিরতি পালন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে তারা।

এসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহবুব এ রহমান বলেন, ঘটনার পরে প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে৷ কিন্তু ঘটনার ১৭ দিন পার হলেও বিচার তো দূরের কথা তদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত জমা হয়নি। বিচারের এমন দীর্ঘসূত্রতা বিচারহীনতার নামান্তর।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থী কিংবা সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। যারা অভিযুক্ত তাদের সবার পরিচয় স্পষ্ট। প্রশাসন তাদের সবাইকে চিনে৷ তাও এতদিনে বিচার নিশ্চিত করতে না পেরে প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে৷ পূর্বেও এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে৷ প্রশাসন সেসব ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। যার কারণেই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত না করলে আমরা প্রশাসনিক সবধরনের সংবাদ বর্জনসহ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।

সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু বলেন, এ ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন চাকসুর কার্যক্রম নেই৷ চাকসু না থাকাতে ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর মুখপাত্র হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছে সাংবাদিকরা৷ যখন সাংবাদিকদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়, তখন মূলত সব শিক্ষার্থীর স্বাধীনতাই কেড়ে নেয়া হয়৷

তিনি আরো বলেন, যখন কোনো সাংবাদিক হেনস্তার শিকার হয় তখন অভিযুক্তরা বলে সাংবাদিক জানলে এরকম করতাম না। তার মানে কি সাংবাদিক না হলেই তাকে মারার কিংবা হেনস্তার অধিকার তার আছে?
এ থেকে বুঝা যায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে নিরাপদ না৷ সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনা চবি ক্যাম্পাসে নতুন নয়৷ কার্যকর শাস্তি না হওয়ায় বারবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে৷ আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ঘটনার বিচার দাবি করছি৷ নতুবা পরবর্তীতে প্রশাসনের সব ধরনের সংবাদ বর্জনসহ কঠোর আন্দোলন ডাক দিতে বাধ্য হবে চবিসাস।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক মারজান আক্তার বলেন, ঘটনার ১৭তম দিনের পরেও কোনও সিদ্ধান্ত দেয়নি প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আমাকে হুমকি দিয়েছে, তারা স্বাচ্ছন্দ্যে আমার সামনে ঘুরে বেড়ায়। এই অবস্থায় তারা আমার ক্ষতিও করতে পারে। এর আগেও গত বছর সাংবাদিক হেনস্থার ঘটনাগুলোর সঠিক বিচার করতে পারেনি প্রশাসন। আমি চাই আমাকে যারা হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

প্রসঙ্গত, গত ৯ ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় চারুকলা ইন্সটিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারধর করেন শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ ভিএক্স ও বাংলার মুখের নেতাকর্মীরা। এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে হেনস্তার শিকার হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও দৈনিক সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মারজান আক্তার ও আরটিভির ফটো সাংবাদিক এমরাউল কায়েস মিঠু। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত মারুফ ইসলামসহ আরো বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী জড়িত ছিলেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ ঘটনার ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।