খেজুর আমদানি ৯০ টাকায়, বিক্রি ১৩শ! জেলা প্রশাসনের অভিযানে ধরা

খেজুরের লাগামহীন দামের রাশ টান দিতে ফলমন্ডিতে অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। আমদানিকারকরা উন্নত জাতের খেজুরকে নিম্ন মানের ঘোষণা দিয়ে দিচ্ছে রাজস্ব ফাঁকি। আবার নানান কারসাজিতে বাড়িয়েছে খেজুরের দাম। অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় তিন আমদানিকারক গুনেছেন জরিমানা।

শনিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো: তৌহিদুল ইসলাম এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত ফলমণ্ডিতে অভিযান পরিচালনা করেন।

জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো: তৌহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, আমদানিকারকদের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এই মৌসুমে যা খেজুর আমাদানি হয়েছে তার গড় মূল্য মাত্র ৮৯ দশমিক ৩৬ টাকা। আর খেজুর বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৩শ টাকা দামে। অভিযানের খেজুর আমদানি থেকে শুরু করে পাইকারি বাজার ও কমিশন এজেন্টদের ব্যাপক অনিয়ম ভ্রাম্যমাণ আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে। আমরা তিন আমদানিকারককে সতর্ক করার পাশাপাশি ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।

ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা শেষে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪০ হাজার ২৪ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে। এগুলোর গড়মূল্য ৮৯ টাকা ৩৬ পয়সা। ফলমন্ডির আড়তে গিয়ে জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণ দেখতে পান পাইকারি বাজারে বিভিন্ন জাতের খেজুর বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এর মধ্যে আজওয়া ৭৫০ থেকে এক হাজার, মাবরুম ১২শ থেকে ১৩শ টাকা, মরিয়ম ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, দাবাস ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, জাহিদি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, মেজডুল খেজুর ১২শ থেকে ১৩শ টাকা, আলজেরিয়ান খেজুর ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি তথ্য ও বাস্তব বাজার দরে বিস্তর পার্থক্য পান ভ্রাম্যমান আদালত।

এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো: তৌহিদুল ইসলাম আরও জানান, আমদানি তথ্য মতে ফলমন্ডি বাজারে খেজুরের আমদানিকারক আছে ১২ জন। ফলমন্ডি বাজারে অভিযানে গিয়ে তিন আমদানি কারকের সন্ধান মেলে। তাদের মধ্যে আল্লাহর রহমত স্টোর গত ডিসেম্বর’২২ থেকে মার্চ’২০২৩ পর্যন্ত ৩৩টি এলসি’র মাধ্যমে মোট ২ হাজার ৫৭২ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করেছে। যেখানে একটি HS Code Fresh Dates-08041019 দেখিয়ে খেজুর আমদানি করা হয়েছে। তাদের গড় আমদানি মূল্য ৭০ দশমিক ১৪ টাকা। আল্লাহর রহমত স্টোরটি জাহিদি, নাসার, আল মাদাফ,ফারাহ মধ্যম জাতের খেজুর আমদানি মূল্যের চাইতে তিন—চারগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের দায়ে আল্লাহর রহমত স্টোরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আলী জেনারেল ট্রেডিং ১০৪ টাকা কেজি মূল্যে ১৬৮ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করেছে। কিন্তু জাহিদি জাতের খেজুর ২৫০-৩০০ টাকা দরে বিক্রির প্রমাণ মিলেছে। এই প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, ফ্রেশ ফ্রুট গ্যালারিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই পাইকারি দোকানটি ঢাকা ভিত্তিক বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম খেজুর আমদানিকারক অ্যারাবিয়ান ফ্রুট ফ্যাক্টরি লিমিটেড এবং মদিনা ট্রেডিংয়ের হয়ে চট্টগ্রামে চড়া দামে খেজুর বিক্রি করছিলো।
আমদানি তথ্যমতে, অ্যারাবিয়ান ফ্রুটস ফ্যাক্টরি লিমিটেড কেজি প্রতি ৮৪ দশমিক ৬৪ টাকা দরে মোট ৯ হাজার ২১১ দশমিক ৭৫২ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করেছে। একটি HS Code দেখিয়ে অ্যারাবিয়ান ফ্রুট ফ্যাক্টরি লিমিটেড ২৫ থেকে ৩০ জাতের খেজুর বাংলাদেশে আমদানি করেছে। আজওয়া, মেজডুল, মাবরুক, সাফওয়া, মরিয়ম প্রভৃতি উন্নত জাতের খেজুর আমদানি করেও সেগুলো কম দাম দেখিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়েছে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে। এরপর এই খেজুর চড়া দামে বিক্রি করছে। জাতভেদে খেজুরের দাম পাঁচশত টাকা থেকে হাজার টাকার উপরেও বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মো: সিরাজুল ইসলাম অ্যারাবিয়ান ফ্রুটস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের মালিক এবং তিনি সাথী ফ্রুটসেরও স্বত্তাধিকারী।

এসোসিয়েশনের সভাপতি মো: সিরাজুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন রমজান আসলেই দেশি-বিদেশি ফল চড়া দামে বিক্রি করতে আমদানিকারক ও কমিশন এজেন্টদের মাধ্যমে একটা চক্র গড়ে তোলেন বলে ভ্রাম্যমান আদালতে কাছে ব্যবসায়ীরা স্বীকার করেছেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।