গরুর দড়ি-খুঁটির বিরোধ: কর্মক্ষম ২ ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা

স্ত্রী, সন্তান, পুত্রবধু ও নাতি নিয়ে অভাবের সংসার জহির আহমেদের। ছাগলের ব্যবসায় করে চালাতেন সংসার। তার সাথে ছেলে জালাল ও কামালের আয় কিছুটা স্বস্তি দিতো। তবে ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সেই কর্মক্ষম দুই ছেলে লাশ হয়ে এখন শুয়ে আছেন কবরে। আর দুই ছেলে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ৪৫ বছরের জহির আহমেদ। অন্যদিকে অকালে স্বামী হারিয়ে কান্না যেন থামাতেই পারছেন না বড় ছেলে জালালের স্ত্রী।

বলছিলাম গতকাল বিকেলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় গরুর দড়ি ও খুঁটি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন হওয়া মো. জালাল (২২) ও কামালের (১৮) স্বজনদের আহাজারির কথা।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকালে উপজেলার দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার পদুয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম খুরুশিয়া মধ্য পাড়া এলাকার গিয়ে দেখা গেছে, নিহতের পরিবারের সদস্যরা এখনও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। একদিকে ছেলে হারিয়ে বাবা-মায়ের আর্তনাদ অন্যদিকে বাবা হারিয়ে সন্তানদের কান্না যেন ভারী করে তুলেছে পরিবেশ।

নিহতদের বাবা জহির আহমেদ বলেন, আমার এই দুই ছেলে বড় ছিলো, তাদের উপার্জনে সংসার চলতো। বড় ছেলের এক সন্তানও রয়েছে। এখন আমি নাতি-পুত্রবধু-নিজের ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে কি করবো।

নিহত জালালের ছেলের স্ত্রী কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বলেন, জীবন শুরুর আগেই আমাদের ওপর এমন নির্মমতা নেমে আসলো। ছেলেকে নিয়ে আমি এখন কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমি চাই আমার সন্তানের বাবা-চাচা হত্যায় জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার হোক।

গরুর দড়ি-খুঁটির বিরোধ: কর্মক্ষম ২ ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা বাবা 1

এর আগে, গত শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার পদুয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম খুরুশিয়ায় গবাদিপশুর রশি ও খুঁটি কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির জের ধরে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলে মো. জালাল (২২) ও কামাল (১৮) নামের দুইজন নিহত হন। এছাড়া আহত হোন আরও ৪ জন । এ ঘটনায় ৪ জনকে এজেহার ২ জনকে অজ্ঞানামা করে হত্যা মামলা দায়ের করেন জহির আহমেদ।

পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শফিকুল ইসলাম (৬০) ও খুরশেদ (৩২)। তারা সম্পর্কে বাবা ও ছেলে। তারা একই ইউনিয়নের পশ্চিম খুরুশিয়া মধ্য পাড়া এলাকার বাসিন্দা।

এদিকে ময়না তদন্ত শেষে আজ নিহত দুই ভাইয়ের মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়ি খুরুশিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জানাজার নামাজ শেষে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় শত শত মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল ইসলাম বলেন, গবাদিপশুর রশি ও খুঁটি গাড়ার মগুর নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ধারালো চুরির আঘাতে ঘটনাস্থলে দুইজন মারা যায়। এই ঘটনায় আমরা দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।