চট্টগ্রামে সাংবাদিক নির্যাতন—জামিন পেলেন ইটভাটা ম্যানেজার তুরি

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ইসলামপুর ইউনিয়নের মঘাছড়ি এলাকায় অবৈধ ইট ভাটার সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিককে জিম্মি করে মারধরের ঘটনায় করা মামলার আসামি কাঞ্চন কুমার তুরির (৩৬) জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. সরওয়ার আলমের আদালত তুরির জামিন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি চট্টগ্রাম খবরকে নিশ্চিত করেন মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশন-বিএইচআরএফ’র মহাসচিব অ্যাডভোটক জিয়া হাবিব আহসান।
তিনি বলেন, সাংবাদিক আবু আজাদের ওপর হামলার ঘটনা আটক কাঞ্চন কুমার তুরির জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক আবু আজাদের পক্ষে আদালতে ছিলেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশন, অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান এসোসিয়েটস। আসামি তুরির পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়েছে চট্টগ্রাম বারের বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম ও সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মুজিবুল হকসহ অন্যান্য আইনজীবীগণ।

এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর রাত পৌনে ১২টার দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রানীর হাট এলাকা থেকে তুরিকে গ্রেফতার করা হয়। ২৭ ডিসেম্বর সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত ১ জানুয়ারি আদালতে পুলিশ কাঞ্চন কুমার তুরিকে জিজ্ঞাসাবাদে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন।
তুরি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজা নগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অমূল্য ডাক্তার বাড়ির জীবন কৃষ্ণ তুরির ছেলে।

গত ২৫ ডিসেম্বর রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ইসলামপুর ইউনিয়নে অবৈধ ইটভাটার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক আবু আজাদ।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক আবু আজাদ নিজে বাদী হয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী (৫৫), সদস্য মহিউদ্দিন তালুকদার মোহন (৪০), ইটভাটার ম্যানেজার কামরান (৩০) ও মোহনের সহযোগী কাঞ্চন তুরি (৩০)। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও ৫-৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে সাংবাদিক আবু আজাদ উল্লেখ করেন, রোববার চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের মঘাছড়িতে সড়কের পাশে মাটি তুলে নামহীন ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ওই ছবি তুলতে গেলে স্থানীয় মেম্বার মহিউদ্দীন তালুকদার (মোহন) ৫-৬ জনকে সঙ্গে নিয়ে আমার সাংবাদিক আবু আজাদের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মারধর করে। এরপর তাকে একটি সাদা রংয়ের নোহা গাড়িতে তুলে নিয়ে মঘাছড়ি বাজারে নিয়ে যায়। সেখানে প্রকাশ্যে তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে আবারও মারধর করা হয়। আবু আজাদের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও আইডি কার্ড তারা কেড়ে নেয়।

মারধরের এক পর্যায়ে মোহনের মোবাইল ফোন দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলে। আবু আজাদের পরিচয় জানার পর মোহন মেম্বার বলেন, এরকম সাংবাদিক মেরে ফেললে কিছু হবে না। এরপর মোবাইল থেকে সব ছবি-ভিডিও ডিলেট করে দেওয়া হয় এবং মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলা হয়। পরে পকেটে মারধরকারী স্থানীয় ইউপি সদস্য নিজের ভিজিটিং কার্ড ঢুকিয়ে দিয়ে বলেন- ‘ক্ষমতা থাকলে কিছু করে দেখাস।’

ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে অবৈধ সেই এবিসি ইটভাটা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।