চবিতে হুট করেই বাড়ল খাবারের দাম, ক্ষোভে ফেটে পড়েছে শিক্ষার্থীরা

রমজান আসতে না আসতেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) হলগুলোতে খাবারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরা।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) হুট করেই প্রতিটি হল থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে খাবারের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। যার সিদ্ধান্ত হয়েছে এর আগের দিন বুধবার অনুষ্ঠিত প্রভোস্ট কমিটির সভায়।

জানা গেছে, ২০১৯-২০ সালে হলের ডায়নিংয়ের এক বেলা নিয়মিত খাবারের মূল্য ছিল ২০ টাকা। ২০২১ এসে তা ৫ টাকা বেড়ে হয় ২৫ টাকা। তবে হুট করেই এখন আরো ১০ টাকা বেড়ে একবেলা নিয়মিত খাবারের দাম এখন ৩৫ টাকা। অপরদিকে রমজানের সেহরির মূল্য গতবছর ছিল ৫০ টাকা। এ বছর তার দাম দাড়িয়েছে ৬০ টাকায়।

এদিকে এমন সিদ্ধান্তের পর পরেই ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে নানান আলোচনা সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরম মাত্রার ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

মো. স্বপন মিয়া নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ১ম বর্ষে যারা আছে তাদের জন্য ৩৫ টাকা আত্মহত্যার মত। অনেকের ২৫ টাকা দিয়ে দুবেলা খাওয়ার সামর্থ্য নেই, সেখানে ৩৫ টাকা অনেক বেশি। মাননীয় প্রভোস্ট, দয়া করে আমাকে ক্ষুধার্থ রাখবেন না। আমার খাবার নিশ্চিত করুন।

মো. শহিদুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, একজন চবি-কালাচানের ছোট গল্প। কম খেলে নাকি শরীর সুস্থ থাকে তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি একবেলা কম খাব। তাছাড়া খাদ্যদ্রব্যের যা দাম তাতে এই ব্যাবস্থার কোন বিকল্প নাই । হলের খাবারের দাম ২০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা হলো আর সেহরির দাম ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা হলো। যদি বলেন খাবারের মান তাহলে উত্তর, একদিন এসে ডাইনিং এ পেটপুরে খেয়ে যান! আর কালাচানের মাসিক খরচ আগে যা ছিল তাই রয়ে গেল কারণ তার বাজানের ইনকাম আগের মতোই আছে! তাই কালাচান এবার শরীর সুস্থ রাখতে চায়!

আসাদ নেওয়াজ নামে একজন লিখেছেন, মাননীয় প্রশাসন, দয়া করে আমাদের একটা জোরে লাথি মেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। কারণ এই তল্লাটে থাকার মতো অবস্থা আর রইল না। এবার সত্যই সেই বাপ-দাদাদের বলে যাওয়া কথাটাই সত্যি হচ্ছে। পেঠে গামছা বেধে পড়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপয়া নেই।
টিউশন করেও যেখানে এতোদিন সবকিছু সামলাতে নাকানিচুবানি অবস্থা হয়েছে। আর এখন গলায় দড়ি বেধে মরা ছাড়া উপায়ান্তর দেখছিনা।

তিনি আরও লিখেন, ভাবতেও পারছেন না এর প্রভাবে কি হতে পারে। হলের খাবারের বিল বৃদ্ধির অজুহাতে এখন প্রত্যেকটা ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের দাম বাড়াবে। একইভাবে বাড়বে কটেজ/রুম/সিট ভাড়া। যাতায়তের দাম বাড়াবে রিকশাওয়ালারা। আর হোটেলের দামের কথা নাইবা বললাম। যুক্তি তাদের কাছে রেডি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পর্যন্ত খাবারে দাম বাড়াইছে। আমরা কোন ছাই। সরকার প্রতি বছর যে কোটি কোটি টাকা বাজেট দিচ্ছে সেখান থেকে নুন্যতম একটা অংশ ভর্তুকি হিসেবে দিলেও তো আজ এই দিন দেখতে হতো না। এটা কোনোদিনও একটা সায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড হতে পারেনা। একটা নোটিশ নেই, পূর্বের কোনো ঘোষণা ছাড়াই এভাবে দাম বাড়ালো। এটা কোনোদিনও আমরা মেনে নেবো না। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এভাবে না খেয়ে মরে যেতে পারি না। কর্তৃপক্ষ যখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তখন কি কোনো ছাত্র প্রতিনিধি ছিলো?

এ বিষয়ে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, খাবারের দাম কমানোর জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে বারবার কথা বলছি। এ নিয়ে আমরা প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপি দেব। খাবারের দাম কমানো না হলে শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আজকে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ আমরা প্রভোস্টদের সাথে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।