চবির শাটলে থামছে না পাথর নিক্ষেপ, ঝরছে রক্ত

চলন্ত শাটলে নিক্ষিপ্ত পাথরের আঘাতে মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইন্সটিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইয়াসীন তুসি। গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) নগরের বটতলী থেকে চবি ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা সাড়ে ৮টার শাটলে যাতায়াত করতে গিয়ে এ ঘটনার শিকার হন তিনি।

আগেরদিন বুধবার ৬ এপ্রিলও চলন্ত শাটল ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ আহত হয়নি। এরকম পাথর নিক্ষেপের ঘটনা হারহামেশাই ঘটতেছে চবির শাটল ট্রেনে। এসব ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে শিক্ষার্থীরা। আর উত্তপ্ত সোশ্যাল মিডিয়াও।

বুধবার (৬ মার্চ) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপে জোবায়ের হোসেন তুষার নামে একজন একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, এই ১০০ গ্রামের ছোঁচালো পাথরটি ৩০ কি.মি বেগে চলমান ট্রেনে ৭০ কি. মি বেগে আপনার চোখ, কপাল, গাল অথবা মাথায় লাগলে কী পরিমান অসহনীয় ব্যাথা আর রক্তক্ষরণ হবে ভাবতে পারছেন? আজ আমার সামনে বসা ব্যাক্তির সাথে এমনটা হলো। প্রতিদিন হচ্ছে কারো না কারো সাথে। কাল আপনার সাথে হবে। হয়তো অজ্ঞান হবেন অথবা একটা চোখ হারাবেন, প্রশাসনের কিচ্ছু হবেনা, ১ লাখ টাকা দিয়ে আপনাকে চুপ করিয়ে রাখবে। এই কচ্ছপ প্রশাসন দিয়ে আর কি বা আশা করা যায়!!! তাই নিজে সচেতন হউন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে শহর এবং শহর থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াতের একমাত্র অফিসিয়াল বাহন এই শাটল ট্রেন। বটতলি-বিশ্ববিদ্যালয় রুটে প্রতিদিন মোট সাত জোড়া শাটল ট্রেন চলাচল করে। এসব শাটলে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার ছাত্রছাত্রী যাতায়াত করে। কিন্তু এসব শাটলে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটে চলন্ত শাটলে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। এতে প্রায়ই কোনো না কোনো শিক্ষার্থী আহত হন। এমনকি চলন্ত শাটলে পাথর নিক্ষেপের ফলে ছাত্রদের মাথা ফেটে যাওয়ারও বেশ কয়েকটি নজির রয়েছে। যার সর্বশেষ নজির গতকালের ঘটনাটি।

এদিকে এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছেন তারা রেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। অপরদিকে রেল কর্তৃপক্ষ বলছেন এসব ঘটনা রুখতে হলে শিক্ষার্থীদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।

পাথর নিক্ষেপের ঘটনাগুলো প্রায় সময়ই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রুপে ও পেইজে প্রায় সময়ই উঠে আসে। গত ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপে মো. আতিকুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী লিখেন, এইমাত্র রাত সাড়ে ৮ টার শাটলে পাশের সিটে পাথর নিক্ষেপ করলো( বটতলী)। ভাগ্য ভালো, কারো কিছু হয়নি। কিন্তু, মাথায় পড়লে তখন! আজ চারটার শাটলেও পাথর নিক্ষেপ করছে। চারটার শাটলে পাথর নিক্ষেপ করার কারণটা একটু অনুমান করা যাচ্ছে। সেটা হলো, ছোট ছোট কিছু ছেলে ট্রেনের ভেতর কিংবা ছাদের উপর থাকে। তাদেরকে লক্ষ্য করে রাস্তার পাশে থাকা ছেলেগুলো পাথর নিক্ষেপ করে। আচ্ছা এই ব্যাপারগুলো সমাধান করার কোনো উপায় নেই?

একই গ্রুপে গত বছরের ৭ নভেম্বর ফুয়াদ হাসান নামে এক ছাত্র লিখেন, ঝাউতলা ক্রস করার সময় টোকাইদের পাথর নিক্ষেপের শিকার হলাম। চশমা ভেঙে চোখের ভেতর কাচ ঢুকে গেছে, হসপিটাল যাচ্ছি। এছাড়াও গত ৯ জানুয়ারি চলন্ত শাটলে বাইরে থেকে ছোড়া পাথরের আঘাতে কৌশিক পাল নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রের মাথা ফাটার খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের ঘটনাতেই রেললাইনের আশেপাশের বিভিন্ন বস্তি এলাকায় বসবাস করা ও রেললাইনের আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো টোকাই ও পথশিশুরা জড়িত।

শিক্ষার্থীরা জানান, শাটল ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্টেশনে থামে। এবং ওসব স্টেশন থেকে প্রায় সময় এসব টোকাই ও পথশিশুরা ট্রেনে উঠে পড়ে। ট্রেন চলার সময় তারা দরজার সামনেই অবস্থান করে। আবার কেউ কেউ ট্রেনের ছাদে উঠে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে। এসময় ট্রেনের বাইরে রেললাইনের আশেপাশে থাকা টোকাইরা ট্রেনের ভেতরে এবং ছাদে থাকা টোকাইদের দেখতে পেলেই তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারে। যা শাটলের দরজা জানালা দিয়ে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের গায়ে আঘাত করে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, শাটলে প্রায় সময়ই পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। এ সমস্যার সমাধানের জন্য আমরা অনেকবার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। উনারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি।

বাংলাদেশ রেলওেয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শাটল ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ সমস্যার পরিত্রাণ পেতে চাইলে শিক্ষার্থীদেরকেই প্রথমে এগিয়ে আসতে। শিক্ষার্থীরা যদি টোকাই ও পথশিশুদের উঠতে না দেয় তাহলে এই সমস্যা ধীরে ধীরে অনেকাংশেই কমে আসবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের লোকজনের সংকটের কারণে আমরাও এই ক্ষেত্রে লোকবল নিয়োগ করতে পারছি না। সকলের সহযোগিতাপূর্ণ সামগ্রিক উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

এমএফ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।