চবি উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে লিগ্যাল নোটিশ

অন্যায়ভাবে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ তুলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট ও চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ রাসেল। চবি পালি বিভাগে অন্যায়ভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে পালি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ প্রার্থী সজীব সিংহ ও বোধি মিত্র শ্রামনের পক্ষে তিনি এ নোটিশ দেন। পালি বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বাতিল করে যথাযথ প্রার্থিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দিলে পরবর্তীতে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে হুশিয়ারি দেয়া হয়।

শনিবার (৮ এপ্রিল) রাতে নোটিশের বিষয়টি সামনে আসে। গত ৩০ মার্চ নোটিশটি পাঠানো হয়েছে বলে আইনজীবী মোহাম্মদ রাসেল মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন।

উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো এ লিগ্যাল নোটিশে একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত চবির পালি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার নিয়ম ভঙ্গ করে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়ার স্ত্রী অভি বড়ুয়াকে। শুধু তাই নয়, পরীক্ষায় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারা, নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদনের শর্তাবলী পুরণ না করাসহ সার্বিক বিষয়ে পালি বিভাগের সভাপতি ও ভাইভা বোর্ডের সদস্য শাসনানন্দ বড়ুয়া রুপন এ প্রার্থীর নিয়োগের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। তা সত্ত্বেও চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের উপস্থিতিতে নিয়োগ বোর্ড বিতর্কিত প্রার্থী অভি বড়ুয়াকেই নিয়োগের জন্য সর্ব প্রথম সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে দুই পদের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও নিয়োগের জন্য ৪ জনকে সুপারিশ করা হয় নিয়োগ বোর্ড থেকে। এর মধ্যে সুপারিশের তালিকায় এক নম্বরেই রাখা হয়েছে সরকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়ার স্ত্রী অভি বড়ুয়ার নাম। যদিও বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত দুই শিক্ষকের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই এখন।

নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষায় অভি বড়ুয়ার নিয়োগের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন পলি বিভাগের সভাপতি। তা সত্ত্বেও উপাচার্যের উপস্থিতিতে সেই অভি বড়ুয়াকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে ভাইভা বোর্ড।

নোটিশে বলা হয় শিক্ষক নিয়োগে দূর্নীতি ও অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেশের প্রচলিত আইন বিরুধী এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য চরম অশনী সংকেত। যেখানে উচ্চতর যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীরাই শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার দাবীদার সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম যোগ্য ও নিয়োগ পত্রের শর্তাবলী পূরণে সক্ষমতা নেই এই রকম প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানকে শেষ করে দেওয়ার সুদুর প্রসারী কৌশল কোন ভাবে কাম্য নয়। এই ধরণের দুর্নীতি মানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতন একটি নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-কে শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে দেওয়ার অপকৌশল।

নোটিশে আইনজীবী রাসেল বলেন, আমার মক্কেলগণ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য যোগ্যতার শর্তাবলী পুরণ করে মৌখিক পরীক্ষায়ও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন এমনকি আমার মক্কেলগণের শিক্ষকতা পেশার সমার্থক সরূপ অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য যোগ্যতা রয়েছে। তা স্বত্ত্বেও কয়েক অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার অপচেষ্টা বিধায় আমার মক্কেলগণ অত্র লিগ্যাল নোটিশের মাধ্যমে উল্লেখিত নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে যথাযথ প্রার্থীদেরকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিনীত আবেদন জানাচ্ছে। অন্যথায় আমার মক্কেলগণ যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

এ বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমার মক্কেলদের যাবতীয় যোগ্যতা থাকা সত্বেও তাদেরকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে এমন একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে যার কিনা আবেদনের যোগ্যতাও ছিল না। এটাও জানতে পেরেছি যে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তিনি বর্তমান একজন সহকারী প্রক্টরের স্ত্রী। তিনিই নাকি প্রভাব খাটিয়ে তার স্ত্রীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করেছেন। এসব কারণে আমি আমার মক্কেলদের পক্ষ হয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমার মক্কেলদেরকেই নিয়োগ দিতে হবে বিষয়টা এমন না। আমরা চাচ্ছি অযোগ্যদের নিয়োগ বাতিল করে যোগ্যদেরকেই যেন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।