চমেকে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের আইসিইউতে ঢুকে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) প্রধান ছাত্রাবাসে নির্যাতনের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা দুই শিক্ষার্থীকে আইসিইউতে ঢুকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম খবরের হাতে দুটি ভিডিও এসেছে। একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা যায় আইসিইউ বেডে থাকা এক শিক্ষার্থীকে মুখোশ পরে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
পরে সেই শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুললে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে যখন চমেকের একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং চলছিল ঠিক সেই সময়ে মুখোশধারীরা আইসিইউতে ঢুকে হুমকি দেয়। শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত তারা একাধিকবার গিয়ে তাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে আমরা ছাত্রদের নিরাপত্তার বিষয়ে তদারকি আরো জোরদার করা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এমন ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে এবং অতীতে কেন ঘটেছিল তা খুঁজের বের করা হবে। কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আইসিইউতে ঢুকে নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের প্রাণনাশের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভিডিওটি আমরা পেয়েছি। তদন্ত কমিটিকে দেওয়া হয়ে। তদন্ত কমিটি বিষয়টি দেখবে।

এর আগে গত বুধবার দিবাগত রাত ৩টায় চার শিক্ষার্থীকে তাদের রুম থেকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করে চমেকে মারামারি করে বহিষ্কার হওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী। নির্যাতনের শিকার চার শিক্ষার্থী হলো ৬২তম ব্যাচের এম এ রায়হান, মোবাশ্বির হোসেন শুভ্র, জাহিদ হোসাইন ওয়াকিল এবং সাকিব হোসেন।
নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বহিষ্কার হওয়া অভিজিৎ দাশ, রিয়াজুল জয়, জাকির হোসেন সায়াল, মাহিন আহমেদ ও ইব্রাহিম সাকিবের বিরুদ্ধের। অভিজিৎ দাশ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি স্বীকারও করেছেন।

নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে এম এ রায়হানে বাড়ি কুমিল্লা এবং মোবাশ্বির হোসেন শুভ্রর বাড়ি নারায়নগঞ্জ। নির্যাতনকারীরা এদুই শিক্ষার্থীকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ না দিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে গাড়িতে তুলে দিয়েছিল।
তাদের চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, এমএ রায়হান বৃহস্পতিবার রাত ২টায় বাড়িতে পৌঁছায়। আমরা তাকে কুমিল্লা মেডিকেলে ভর্তি হতে বলেছি এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে এখান থেকে যাবতীয় সহযোগিতা করা জন্য বলে দিয়েছি।
আর মোবাশ্বির হোসেন শুভ্র নারায়নগঞ্জ পৌঁছতে ভোর ৪টা হয়ে যায়। তাকেও আমরা হসপিটালাইজ করতে এখান থেকে যোগাযোগ করে সহযোগিতা করেছি।

এর আগে ২০১১ সালে চমেকের ডেন্টাল ইউনিটের শিক্ষার্থী আবিদকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গিয়েছিল আবিদ। ২০২১ সালে চমেকে ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষে মেহিদী আকিবের মাথার খুলির হাড় ভেঙ্গে যায়। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে সেই হাড় প্রতিস্থাপন হয়েছিল। মেহেদী আকিবও নির্যাতনের শিকার হওয়া চার শিক্ষার্থীর ব্যাচ ম্যাট।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।